হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম
আমরা বিভিন্ন সময়ে দলিলের নাম শুনে থাকি। জমি দখল নেয়ার জন্য জমির দলিল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমির দলিলের মধ্যে অনেকগুলো ভাগ থাকে। প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ধরনের দলিল রয়েছে। এর মধ্যে হেবাদ দলিল অন্যতম। একবার হেবা দলিল রেজিস্ট্রি করার পরে সেটি বাতিল করা যায় কিনা এ নিয়ে অনেকের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকে। আদৌ হেবা দলিল বাতিল করা যায় কিনা অথবা করা গেলেও হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম কি? এটি আপনার অবশ্যই জানা উচিত।
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক হেবা দলিল কাকে বলে? সাধারণত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য হেবা অর্থাৎ দানপত্র দলিল। হেবা দলিল হল একটি দালিল যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তি বিনামূল্যে অন্য কোনো ব্যক্তিকে প্রদান করে। এটি একটি দলিলপত্র যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার সম্পত্তির মালিকানা অন্য একজন ব্যক্তিকে বিনামূল্যে হস্তান্তর করে।
যেমন আমাদের সমাজে দেখা যায় বিভিন্ন সময় আমাদের দাদা দাদী কিংবা বাবা-মা খুশি হয়ে তাদের নিজস্ব সম্পত্তি নাতি নাতনি কিংবা ছেলে মেয়ের নামে হেবা করে দিয়ে যায়। আবার কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি কোনো বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে দান করে। অবশ্যই এটি করার জন্য হেবা দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয় এবং এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে অন্য কাঙ্খিত ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করতে হয়। তবে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হেবা রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে সেটি বাতিল করা যায় কিনা অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে ।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
হেবা দলিল কি বাতিল করা যায়?
একবার হেবা দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে আপনি চাইলে ইচ্ছামতো সেটিকে বাতিল করতে পারবেন না। দুঃখের বিষয় হলো গ্রহীতা কর্তৃক সম্পত্তির দখল বুঝে পাবার পর হেবা বাতিল করা যায় না। গ্রহীতা কর্তৃক সম্পত্তি দখল বুঝে পাওয়ার পূর্বে পর্যন্ত কয়েকটি নিয়মের আওতায় হেবা দলিল বাতিল করা যায় এবং করা যায় না। তা নিম্ন নিয়ে আলোচনা করা হলো-
হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম
হেবা দলিল বাতিল করার জন্য অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে উচ্চ আদালতে দলিল বাতিলের মামলা করে রায়-ডিক্রী নিতে হবে। এই সমস্ত শর্তগুলো অবশ্যই প্রমাণ সাপেক্ষে আদালতে দলিল বাতিলের আবেদন করতে হবে। তাহলে হয়তো আদালত হেবা বাতিলের অনুমতি প্রদান করবে। জানুন কখন হেবা দলিল বাতিল করা যাবে এবং কখন যাবেনা!
যখন বাতিল করা যায়
- দখলের পূর্ব সময় পর্যন্ত সম্পত্তি দাতার মনের পরিবর্তন হলে। অর্থাৎ দাতা যদি দান দলিল সম্পাদনের পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং দানকৃত সম্পত্তি ফেরত চায়, তাহলে দান দলিল বাতিল করা যেতে পারে।
- দাতা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দান করতে বাধ্য হলে, অর্থাৎ জোর জবরদস্তি করে রেজিস্ট্রি করলে
- ভয় ভীতী বা প্রলোভন দেখাইয়া দানপত্র সম্পাদন করলে।
- মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত থাকা অবস্থায় কৌশলে দাতার থেকে দলিল রেজিষ্ট্রি করে নিলে, অর্থাৎ দাতার মানসিক অবস্থার কারণে যদি সে দান দলিলের অর্থ বুঝতে না পারে তখন বাতিলের আবেদন করা যাবে।
- হেবা দলিলের শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে। উদাহরণস্বরূপ, দান দলিলে যদি বলা হয় যে, গ্রহীতা দানকৃত সম্পত্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার করবে, তাহলে গ্রহীতা যদি সেই শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে দাতা দান দলিল বাতিল করতে পারে।
যখন বাতিল করা যায় না
- দলিল গ্রহীতা যদি মারা যায়
- দাতা-গ্রহীতা সম্পর্কে স্বামী বা স্ত্রী হয়।
- দাতা গ্রহীতার মধ্যে বিবাহ অযোগ্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে
- গ্রহীতা কর্তৃক সেবা হেবা সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করে ফেললে।
- যদি কোন কারনে সম্পত্তি বিলীন কিংবা ধ্বংস হয়ে যায়
শেষ কথা
হেবা দলিল বাতিল সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি কখনো আপনার কোন প্রয়োজনে হেবা দলিল বাতিল করতে হয় তাহলে হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম অনুযায়ী আদালতে আবেদন করবেন। অবশ্যই কাউকে সম্পত্তি দান করলে দান করার পূর্বে ১০০ বার ভেবেচিন্তে দান করবেন, অথবা কারো কাছ থেকে জোর জবরদস্তি করে সম্পত্তি হেবা করে নেওয়ার পূর্বে ১০০ বার ভেবে নিবেন।