এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম
বাসস্থান পরিবর্তন, চাকরিতে বদলি কিংবা বিয়ের কারনে নারীদের ঠিকানা পরিবর্তন হলে এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে হয়। আপনিও আপনার এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে বিস্তারিত জেনে নিন এই পোস্টে।
সম্পূর্ণ বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, এক উপজেলা/জেলা থেকে অন্য উপজেলা/জেলাতে স্থানান্তর করতে চাইলে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হয়।
ভোটার আইডি কার্ড নাগরিক সুবিধা ভোগের একটি বাধ্যতামূলক নথিপত্র। নতুন ঠিকানায় গেলে ভোট দেওয়ার অধিকার, নাগরিক সেবা ভোগের অধিকার পেতে এনআইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করতে হবেই। তাই, এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন কিভাবে করবেন ও কি কি ডকুমেন্টস লাগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়েই আজকের আলোচনা।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করবো কিভাবে?
নির্বাচন কমিশনের নতুন পরিপত্র অনুযায়ী এন আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য অবশ্যই বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করতে বা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যেই এলাকায় আপনার স্থায়ী ঠিকানা করতে চান আপনাকে আগে সেই নির্বাচনী এলাকায় ভোটার হতে হবে। বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করলেই স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন এর আবেদন করতে পারবেন।
দেখুনঃ ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম
স্থানীয় ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন ফরম -১৩ পূরণ সহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করে, এনআইডি সংশোধন ফি প্রদান করে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। ঠিকানা সংশোধিত হলে রি-ইস্যুর ফি পরিশোধ করে নতুন ঠিকানার এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
এছাড়াও, শুধু পোস্ট অফিস এবং হোল্ডিং নং পরিবর্তন করতে অনলাইনে নির্বাচন অফিসের ওয়েবসাইটে আবেদন করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড ও পেমেন্ট পরিশোধ করলেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশোধিত এনআইডি পাওয়া যায়।
এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন বা ভোটার এলাকা স্থানান্তর করতে কি কি লাগে
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- সঠিকভাবে পুরনকৃত ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম (ভোটার মাইগ্রেশন ফরম- ১৩)
- যে এলাকায় স্থানান্তর হবেন তার আওতায় নাগরিকত্ব সনদ
- ভোটার এলাকা স্থানান্তরের জন্য আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ/ চেয়ারম্যান এর কার্যালয় থেকে একটি ভোটার স্থানান্তর প্রত্যয়ন পত্র।
- যেকোনো একটি ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি)।
- এছাড়াও স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে অন্যান্য কাগজপত্র চেয়ে থাকলে সেগুলো।
এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন
এনআইডি কার্ডে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায়, কিংবা ভোটার জেলায় অর্থাৎ স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবেন মাত্র কয়েকটি ধাপে – প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করে নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
ধাপ ১: আবেদন ফরম সংগ্রহ
এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে, ভোটার মাইগ্রেশন ফরম- ১৩, এই লিংকে প্রবেশ করে ডাউনলোড করে নিন। তারপর, যথাযথভাবে তা পূরণ করে নিন। ভোটার ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন ফরম পূরণের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে আপনার-
- উপজেলা, জেলা,
- আবেদনকারীর নাম
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
- জন্ম তারিখ
- বর্তমানে যে এলাকায় তালিকায়ভুক্ত আছে সে সংক্রান্ত তথ্যাবলী
- যে এলাকায় স্থানান্তর হতে ইচ্ছুক সে সম্পর্কিত তথ্যাবলী
- স্থানান্তরের কারণ
ইত্যাদি অপশন গুলো সঠিকভাবে পূরণ করে নিন। উক্ত ফরমে চাওয়া ভোটার নাম্বার টি ভোটার লিস্টে পেয়ে যাবেন। এটা উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকেই সংগ্রহ করতে পারবেন।
ধাপ ২: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নির্বাচন অফিসে জমা
ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন ফরম সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো সংগ্রহ করে আপনার স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিন।
ধাপ ৩: যাচাই করন ও সংশোধন ফি প্রদান
এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে আপনার প্রয়োজনে ডকুমেন্টস ও আবেদনটি যাচাই করা হবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি প্রদান করতে হবে।
ধাপ ৪: নির্বাচন হাইকমিশনে সংযোজন
উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে নির্বাচন হাইকমিশনে তথ্য প্রদান করার পর তার ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে নতুন এলাকার ডাটাবেজে সাবমিশন সম্পন্ন করা হয়।
ধাপ ৫: ভোটার এলাকা স্থানান্তর
উপরোক্ত ধাপগুলো সম্পন্ন হবার পর এলাকায় ভোটার হবার সুযোগ পাবেন এবং সেখানেই নাগরিকত্ব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে, নতুন এলাকায় আইডি কার্ড পেতে রিইস্যু ফি প্রদান করে তা সংগ্রহ করতে পারবেন।
অনলাইনে এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে প্রথমে বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ যেই এলাকায় স্থানীয় ঠিকানা করতে চান সেই এলাকায় ভোটার স্থানান্তর করতে হবে। সহজ কথা বলতে গেলে প্রথমেই আপনাকে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হবে। যেমন আপনার বর্তমান ঠিকানাকেই আপনি স্থায়ী ঠিকানায় পরিবর্তন করতে পারবেন এজন্য অবশ্যই আপনাকে ভোটার আইডি কার্ডের বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করতে হবে।
এরপরে অনলাইনে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন। এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে আবেদন করার বিস্তারিত নিয়ম নিচের ধাপগুলোতে ছবিসহ দেখানো হলো:
ধাপ ১: NIDW একাউণ্ট লগিন/ রেজিস্টার
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন (Bangladesh Election Commission) এর National Identity Registration Wing ওয়েবসাইটের- https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই লিংকে ভিজিট করে ‘রেজিস্টার’ বাটনে ক্লিক করুন। পরবর্তী পেইজে, ধারাবাহিকভাবে আপনার-
- NID নম্বর
- জন্ম তারিখ
- ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট করুন।
তারপর, বিভাগ, জেলা ও উপজেলার তথ্য দিয়ে পরবর্তী অপশনে যান। এবার, মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করে নিন। সর্বশেষ, NID Wallet এপ্স এর মাধ্যমে ফেস ভেরিফাই করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন।
যদি আপনার পূর্বে একটি একাউন্ট থাকে তাহলে ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করুন।
ধাপ ২: আপনার এনআইডির প্রোফাইল অপশনে যান
ফেস ভেরিফাই করার পর রি-ডাইরেক্ট হয়ে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি অনলাইন ড্যাশবোর্ড ওপেন হবে। ড্যাশবোর্ডে আপনার ছবিসহ এনআইডি কার্ডের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন। এখানে যেকোনো তথ্য সংশোধন করতে ‘প্রোফাইল’ অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: ঠিকানা অপশনে যান
প্রোফাইল অপশনে ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা অপশন পাবেন। এখান থেকে ঠিকানা অপশনে গিয়ে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দেখতে পাবেন। যেকোনো তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে উপরের ‘এডিট’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪: ঠিকানা সংশোধনের জন্য এডিট করুন
এই পেইজে, এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে স্ক্রল করে নিচে যান। তারপর, স্থায়ী ঠিকানা (এই ঠিকানায় ভোটার) অপশন দেখতে পাবেন। এবার, নিচে থাকা ফর্মটি পূরণ করুন।
ধাপ ৫: এডিট করা তথ্য যাচাই
আবেদন সম্পন্ন করতে পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। সংশোধিত তথ্য পূরণ করার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করলে সংশোধনের পূর্বের তথ্য এবং পরবর্তী তথ্য দেখতে পাবেন। এখানে তথ্য সঠিক হলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬: পেমেন্ট পরিশোধ
এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন এর জন্য আবেদন সম্পন্ন করতে পরবর্তী ধাপে যেতে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি পরিশোধ করতে হয়। আপনার ব্যক্তিগত বিকাশ একাউন্ট কিংবা কোন বিকাশ এজেন্টের কাছে গিয়ে এই ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
সেজন্য-
- বিকাশ এপ্স ওপেন করে পে বিল অপশনে যান।
- বিকাশের পে বিল সার্ভিসেস গুলো থেকে NID Service (সরকারি ফি) অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- এবার, এনআইডি সার্ভিসের আবেদনের ধরনে – NID Info Correction সিলেক্ট করুন। তারপর নিচে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারটি দিয়ে পরবর্তী পেইজে যান।
- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি 230 টাকা দেখতে পাবেন। নিচে ট্যাপ করে পরবর্তী পেইজে যান।
- এবার, আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন কোডটি দিয়ে পরবর্তী পেইজে টাইপ করে ধরে রেখে ট্রানজেকশন সম্পন্ন করুন।
ধাপ ৭: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড
ট্রানজেকশন সম্পূর্ণ হলে NIDW ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনের ধরন ও বিতরনের ধরন সিলেক্ট করে পরবর্তী পেইজে যান। এবার, মে এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন করতে চান তার জন্য পূর্বের সংগ্রহ করে রাখা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো আপলোড করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৮: এনআইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন নিশ্চিত করুন
আবেদন সম্পন্ন করার পর বিস্তারিত তথ্য একটি পেইজে দেখতে পাবেন। সেখান থেকে নিশ্চিত করুন বাটনে ক্লিক করে আবেদন সম্পন্ন করুন।
ব্যাস, আপনার দেওয়া তথ্য ও ডকুমেন্টস সঠিক ও যুক্তিসম্পন্ন হলে যাচাই-করণের মাধ্যমে পরবর্তীতে আপনার অনলাইন ভোটার এলাকা স্থানান্তর করা হবে।
নতুন ঠিকানায় আইডি কার্ড কিভাবে পাবেন?
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করার পর আবেদনের কাঙ্খিত তথ্য সংশোধিত হয়েছে কিনা তাই অনলাইনে NIDW ওয়েবসাইটে লগইন করে যাচাই করতে পারবেন। এক্ষেত্রে, নতুন এলাকায় ভোটার হওয়ার সুযোগ পেলেও আপনাকে সংশোধিত NID কার্ড প্রদান করা হবে না।
নতুন ঠিকানায় আইডি কার্ড পেতে পুনরায় এনআইডি প্রোফাইলের ড্যাশবোর্ড এ গিয়ে রিইস্যু অপশনে প্রবেশ করে ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধ করার পর আপডেট তথ্য নির্বাচন কমিশনের অনলাইন ডাটাবেজে সংযোজন করা হবে। এবার, অনলাইন থেকে আইডি কার্ড ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে নতুন এলাকার নাগরিকত্ব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কিত সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর (FAQ’s)
ঠিকানা পরিবর্তন একটি ‘ক’ ক্যাটাগরির সংশোধনের বিষয়বস্তু। এ ধরনের তথ্য সংশোধনে ৭ দিন সময় লাগে। এক্ষেত্রে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন অফিসার।
এনআইডি কার্ডের যেকোন তথ্য একবার সংশোধন করা যায়। তাই, নির্দিষ্ট কোন তথ্য সংশোধনে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।