সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ২০২৩
কানাডা একটা অন্ত্যন্ত সুন্দর ও উন্নত রাষ্ট্র। হয়তো আপনিও ভাবছেন কানাডা যাওয়ার কথা। তাই চলুন জেনে নেই- সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়, কিভাবে কানাডার ভিসা পাওয়া যাবে, কানাডা ভিসা আবেদন করার নিয়ম, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস কি কি? ও কত টাকা ও সময় লাগবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়
সরকারিভাবে কানাডা যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই IELTS করতে হবে। ইংরেজিতে দক্ষতা কানাডা যেতে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই IELTS স্কোর অবশ্যই ভালো হতে হবে। এবং কানাডার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোন কাজে নিয়োগ পাওয়ার জন্য একটি কাজে দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে কানাডা ভিসা প্রোগামে আবেদন করতে পারেন।
কানাডা একটি আধুনিক, উন্নত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা দেশ। প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রায় ৩ লক্ষ কর্মী নিয়োগ করা হয় এই দেশে। যোগ্য কর্মী ও ব্যক্তিরাই সেখানে সরকারি ভাবে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে।
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় হিসেবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও অভিবাসী হওয়ার জন্য কিছু প্রোগ্রাম চালু আছে-
- Express Entry Programme
- LMIA Work Permit Visa
- PNP Programme
- Family Class Sponsorship
- Investment Immigration Programme
চলুন এই প্রোগ্রাম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-
- Express Entry Programme:- এই প্রোগ্রামে প্রয়োজনীয় কর্মী বাছাই করে নিয়োগ দেওয়া হয়। কর্মি বাছাই করার ক্ষেত্রে দক্ষতা, যোগ্যতা মূল্যায়ন করে বিচার-বিশ্লেষনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি ৩ টি পলিসি এই প্রোগ্রামে কাজ করে যাচ্ছে।(1) কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাব (CEC), (2) ফেডারেল স্কিল ওয়ার্কার প্রোগ্রাম (FSWP), (3) ফেডারেল স্কিল ট্রেড প্রোগ্রাম (FSTP).
এরাই কর্মী নিয়োগ করে ও ভিসা প্রদান করে থাকে। এই প্রোগ্রামের আওতায় কানাডা গেলে পরবর্তীতে অভিবাসী হওয়া যায়। - LMIA Work Permit Visa:- LMIA একটি কর্মীনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন চাকরির অফার পাওয়া যায়েই প্রতিষ্ঠানে।সরকারিভাবে কানাডা যাতে এখানে আবেদন করে প্রথমে চাকরির আসন নিশ্চিত করতে হয়
- PNP Programme:– PNP বা প্রাদেশিক মনোনিত প্রোগ্রামে কান্ডার লেবার ক্রাইসিস ফুলফিল করতে কাজ করে। এক্ষেত্রে লেবারের প্রয়োজনে কোম্পানির মনোনয়ন গ্রহন করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দক্ষ মানবসমাজ নিয়োগ করা হয়।
- Family Class Sponsorship:- কানাডায় নিকটস্ত কোন আত্নীয় অবস্থান করলে পরিবারের সদস্যদের জন্য ভিসা স্পন্সর করতে পারে। এক্ষেত্রে কিভাবে কানাডা ঐ ব্যক্তির মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে তা উল্লেখ করতে হবে।
- Investment Immigration Programme:- কানাডায় বিভিন্ন খাতে ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চায় এমন লোকজন এই প্রোগ্রামে কানাডা যাওয়ার অনুমতি পায়।
উপরোক্ত প্রোগ্রাম গুলো হলো ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও অভিবাসী হওয়ার জন্য সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়।
কানাডা ভিসা পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ ও অন্যান্য মধ্যম আয়ের দেশগুলো থেকে কানাডা যেতে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। যেমন স্টুডেন্ট ভিসা, ট্যুরিস্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও ইনভেস্টমেন্ট ভিসা ইত্যাদি। ভিসার ধরনের ভিন্নতা অনুযায়ী বিভিন্ন উপায়ে ভিসা পাওয়া যায়। তবে নিম্নোক্ত উপায়ে ভিসা সংগ্রহ করা যায়-
- ভ্রমনের জন্য কানাডার সরকারি Electric Travel Othorisation সংগ্রহ করতে হয়।
- কর্ম ভিসার জন্য কোন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের দারস্ত হতে হবে। এরপর কানাডার সরকারের কর্মসংস্থান প্রকল্পে কানাডা ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
- আবেদন গ্রহন করা হলে এম্বাসি থেকে ভিসা প্রসেসিং করা হয়।
- স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ রয়েছে। সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে IELTS Score ও Educational Result দিয়ে অন্যান্য ডকুমেন্টস সহ আবেদন করতে হয়। ভর্তির নির্ধারিত Criteria অনুযায়ী হলে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া যায়। এছাড়াও স্কলারশিপ পেয়ে ভিসা পাওয়া যায়।
- কানাডার সরকারি ওয়েবসাইটে ca আপনার দক্ষতা কানাডার কি উপকারে আসতে পারে তা উল্লেখ করে আবেদন করতে পারবেন।
- ঢাকায় অবস্থিত Embassy of Canada থেকেও ভিসা প্বাওয়া যায়।
সকল তথ্যের জন্য ভিজিট করতে পারেন কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট- canada.ca
জানতে পারেনঃ বাংলাদেশের জন্য কোন কোন দেশের ভিসা খোলা আছে
কানাডা ভিসা আবেদন করার নিয়ম
বর্তমানে কানাডা তে ই-ভিসা সার্ভিস চালু থাকায় আপনি ঘরে বসেই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আপনার বায়োমেট্রিক্স দেওয়ার জন্য নিকটস্ত কোন কানাডিয়ান কনস্যুলেট বা কানাডার এম্বাসিতে যেতে হবে। সেখানে ভিসার জন্য আপনার ছবি তুলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট/ আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করবে
যে ওয়েবসাইটে আপনি সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় আবেদন করতে পারবেন সেটির লিংক- canada.ca।
এটি কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট। এখানে আবেদন করার নিয়ম-
- প্রথমে সরাসরি এই লিংকে প্রবেশ করুন- কানাডা ভিসা আবেদন ফরম।
- এখানে An Application Package এ ক্লিক করতে হবে তারপর নিচের ক্যাটাগরি গুলো ধাপে ধাপে বাছাই করতে হবে। এবং Get the Application Package এ ক্লিক করতে হবে।
- উপরের ছবিতে তীর চিহ্নিত স্থানের ধাপে ধাপে আবেদন করতে হবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে।
- আপনার আবেদন ফরম সাবমিট করার পর তা সম্পূর্ন করার জন্য হোম মেনু তে গিয়ে Pay your fees এ ক্লিক করে ফি পরিশোধ করতে হবে।
এই ওয়েবসাইটে সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ভিসার যাবতীয় প্রশ্ন ও সমাধানও আপনি পেয়ে যাবেন।
কানাডা ভিসা পেতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
কানাডা ভিসা পেতে যা যা লাগবে-
- পাসপোর্ট
- ca ওয়েবসাইটে আবেদনের কপি।
- ভিসার ফি প্রদানের প্রমান হিসেবে ব্যাংক রশিদ।
- কানাডিয়ান কনস্যুলেট থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি
- আর্থিক উৎসের প্রমানস্বরূপ ব্যাংক ব্যালেন্স ১০ লক্ষ টাকা দেখাতে হবে।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- মেডিক্যাল ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট
- জাতীয় পরিচয়পত্র
উক্ত ডকুমেন্ট গুলো নিকটস্ত কানাডিয়ান কনস্যুলেটে প্রদান করে ভিসা প্রসেসিং শুরু করতে হবে।
কানাডা ভিসা পেতে কত সময় ও টাকা লাগে
কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করার পর ভিসা প্রসেসিং করতে ১৫,০০০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়। তারপর প্রসেসিং হতে প্রায় ৭২ ঘন্টা সময় লাগে। তবে ভিসা হাতে পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। অন্যদিকে, কানাডায় যেতে একেক ধরনের ভিসার জন্য একেক রকম খরচ হবে। যেমন-
- ৩-৬ মাস মেয়াদি ট্যুরিস্ট ভিসায় কানাডা যেতে প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা খরচ হবে।
- স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যেতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়।
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কানাডা যেতে প্রায় ৭-১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এবং ১০ লক্ষ টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হবে।
- কৃষি ভিসায় কানাডা যেতে প্রায় ৫-৮ লক্ষ টাকা লাগে।
এভাবে বিভিন্ন ভিসার জন্য প্রসেসিং সময় ও খরচ কম বেশি হতে পারে।
কানাডা ভিসা নিয়ে যত প্রশ্ন- FAQ
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায়ে কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় প্রায় ৭-১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যালেন্স ১০ লক্ষ টাকার স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে।
কানাডা ভিসা প্রসেসিং ফি ১৫৫$ বা প্রায় ১৫,০০০ টাকা প্রদান করতে হয়।
কানাডায় প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩ লক্ষ কর্মী নিয়োগ করা হয়।
স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যেতে নুন্যতম HSC পাশ হতে হবে। এবং ফলাফল কমপক্ষে ৪.০০ লাগবে।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিলো সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। লেখাটি কেমন হলো তা কমেন্ট করে জানাতে ভূলবেন না।