বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম : Boyosko vata online application
নিজের পরিবার বা অন্য কারো পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তির জন্য বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে চান? এই পোস্টে আবেদন করার নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বিস্তারিত তুলে ধরা হল। এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা দেখে নিন বয়স্ক ভাতায় আবেদন করার জন্য। Boyosko vata online application 2023
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত উন্মুক্ত একটি ভাতা হল বয়স্ক ভাতা। আপনি যদি নিজের জন্য বা পরিবারের বয়স্ক সদস্যের জন্য এই সরকারি অনুদান পাওয়ার নিয়ম খুঁজে চলেছেন তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনাকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
বয়স্ক ভাতা কী?
বাংলাদেশের দুস্থ, দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ শ্রেণির নাগরিকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সরকার এ ভাতা চালু করে। ১৯৯৭- ৯৮ অর্থ বছরে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি শুরু হয়। স্বল্প উপার্জনক্ষম বা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক অবলম্বন দিয়ে থাকে বয়স্ক ভাতা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। কার্যক্রম শুরুর বছর দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতি ওয়ার্ডের ৫জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলা সহ মোট ১০ জন করে বয়স্ক নাগরিককে মাসিক ১০০ টাকা হারে এই ভাতা প্রদান শুরু হয়। বর্তমানে মাসিক ৫০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা দেয়া হয়। বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারীকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। তবেই আপনি এই অনুদান পাবেন।
বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা
- প্রথমত বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির জন্য আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- আবেদনকারী পুরুষ হলে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর এবং মহিলা হলে সর্বনিম্ন ৬২ বছর বয়স্ক হতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সময় অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বয়স নির্ধারণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা এসএসসি / সমমান পরীক্ষার সনদ মূল্যায়ন করা হবে। বয়স নির্ধারণে কোনো ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হলে কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে।
- প্রার্থীর জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকতে হবে
- প্রার্থীকে উক্ত এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
- আবেদনকারীর বার্ষিক গড় আয় ১০০০০/ দশ হাজার টাকা বা তার কম হতে হবে।
- শারীরিক ভাবে অক্ষম ব্যক্তি অগ্রাধিকার পাবেন
- বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, বিচ্ছিন্ন নাগরিকদের ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দেয়া হবে
- এছাড়া ভূমিহীন নাগরিক বয়স্ক ভাতার জন্য অগ্রাধিকার পাবেন।
বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা
- ব্যক্তি যদি সরকারি কর্মচারী পেনশনভোগী হয়ে থাকেন তাহলে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
- ব্যক্তি দুস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারী হলে বয়স্ক ভাতার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন না।
- অন্য কোনো সরকারি কর্মসূচির আওতায় নিয়মিত অনুদান পেয়ে থাকলে বয়স্ক ভাতা পাবেন না
- বেসরকারি কোনো সংস্থা বা সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত আর্থিক ভাতা প্রাপ্ত হলেও বয়স্ক ভাতার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম
বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে হবে www.mis.bhata.gov.bd/onlineapplication এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে অনলাইন ফর্ম প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করে আপনি আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন। বয়স্ক ভাতার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও ঘরে বসে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া অফলাইনে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এবার চলুন তাহলে অনলাইনে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৩
নিম্ন বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা কয়েকটি পদ্ধতিতে আপনি ঘরে বসেই অনলাইন এর মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ধাপ ১. নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ
মোবাইল অথবা কম্পিউটারে গুগল ক্রোম বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিন থেকে www.mis.bhata.gov.bd/onlineapplication লিংকের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। তারপর নিচের ছবির মত একটি পেজ দেখতে পাবেন। এখন নির্বাচন করুন বাক্স থেকে বয়স্ক ভাতা নির্বাচন করুন।
ধাপ ২. জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর প্রদান
অতঃপর জাতীয় পরিচিতি নম্বরের ঘরে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র (NID Card) এর নম্বর লিখুন। পাশের দ্বিতীয় ঘরে জন্মতারিখ নির্বাচন করুন। তারপর যাচাই করুন লেখার উপর চাপ দিন।
ধাপ ৩. প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান
এরপরে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে সেখানে দেখতে পাবেন,আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে কিছু তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ করা আছে। যেসব তথ্য পূরণ করা থাকবে না সেগুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন।
ধাপ ৪. অন্যান্য তথ্য প্রদান
আবেদনকারীর বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, বার্ষিক আয়, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্য, বাসস্থান সংক্রান্ত তথ্য, ভূমির পরিমাণ ও সরকার বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে।
ধাপ ৫. যোগাযোগের তথ্য প্রদান
আবেদনকারীর ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস (যদি থাকে) দিয়ে নির্ধারিত ঘর পূরণ করতে হবে। প্রদত্ত সকল তথ্য ঠিক আছে কিনা দেখে নিয়ে সংরক্ষণ লেখার উপর চাপ দিন। এভাবে আবেদন পত্র জমা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করুন
ধাপ ৬. আবেদনপত্র প্রিন্ট করানো
প্রিন্ট অপশনে চাপ দিয়ে আবেদনপত্রটি pdf ফরম্যাটে ডাউনলোড করে নিন। স্থানীয় কম্পিউটারের দোকান থেকে এটি প্রিন্ট করিয়ে নিন।
ধাপ ৭. প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর সংগ্রহ
প্রিন্ট করানোর পর আবেদন পত্রটির নির্ধারিত অংশে স্থানীয় চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলর এর স্বাক্ষর নিন। তারপর সমাজসেবা মাঠকর্মী বা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন পত্রটি জমা দিন। এই পর্যায়ে কাজ শেষ।
বয়স্ক ভাতা আবেদনের সময় সীমা
বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির জন্য নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করতে হয়। সমাজ সেবা অধিদপ্তর প্রতি বছর বয়স্ক ভাতা আবেদনের সময় নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে থাকে। আপনি অনলাইন থেকে শেষ তারিখ জেনে নিতে পারেন।যখন অনলাইনে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদনের কার্যক্রম চলমান থাকে, তখন ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
বয়স্ক ভাতা মোবাইল ব্যাংকিং
বয়স্ক ভাতার জন্য সঠিকভাবে আবেদন করার পর, স্থানীয় কমিটি যদি আপনাকে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করে তাহলেই আপনি বয়স্ক ভাতা পাবেন। বর্তমানে বিকাশ, নগদ বা রকেটের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত করোনাকালীন সময় থেকে সরকার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন অনুদান ও ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রার্থীকে জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে হবে।
সরকার সরকারি G2P ( Government to person) প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে। এতে করে জনসাধারণের দুর্ভোগ যেমন কমেছে তেমনি অনুদান বণ্টনের সমস্যা কমেছে। বলাই বাহুল্য, অনৈতিকভাবে অর্থ আত্মসাতের সম্ভাবনাও কমে এসেছে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
বয়স্ক ভাতা সম্পর্কিত সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা
মূলত সুবিধাবঞ্চিত অসহায় বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের এই ভাতা দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ এই বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। তাদের মধ্যে অনেকেই কাজ করতে অক্ষম, সম্পদহীন। কারও পরিবার নেই,কেউ কেউ আবার পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় শেষ বয়সে।
সরকার এই নাগরিকদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা ও জীবনধারণের অবলম্বন দেয়ার প্রচেষ্টায় বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে বাস্তুহারা, অক্ষম ও সর্বোচ্চ বয়স্কের ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। তবে এই ভাতা নেয়ার জন্য পুরুষের বয়স ন্যূনতম ৬৫ ও মহিলা প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ৬২ হতে হবে।
বয়স্ক ভাতা প্রদানের সময় প্রার্থীর শারীরিক অবস্থা, আর্থিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা, বয়স ও নাগরিকত্ব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
সর্বশেষ কথা
আশা করি, এই লেখাটির মাধ্যমে আপনি বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। লেখা সম্পর্কে আপনার কোন জিজ্ঞাসা থাকলে জানাতে ভুলবেন না।