অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন নিয়ে যারা প্রচুর চিন্তিত থাকেন তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট। কিভাবে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড ভাই স্মার্ট কার্ড সংশোধন করা যায় এবং জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে যা যা প্রয়োজন তা বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভোটার আইডি কার্ড আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ডকুমেন্ট। একটি দেশের নাগরিকত্বের পরিচিতি বহন করে ভোটার আইডি কার্ড। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকত্বের পরিচিত যেমন নাম ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ থাকে ভোটার আইডি কার্ডএ।
ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজন সর্বত্র। ছোট ছোট কাজ থেকে শুরু করে বড় বড় প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ভোটার আইডি কার্ডের দরকার পড়ে। আর সেই ভোটার আইডি কার্ড যদি ভুলবশত ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয় অর্থাৎ ভুল তথ্য উল্লেখিত হয় তাহলে দুশ্চিন্তার শেষ নেই ,কারণ ভুলের কারণে ছোট-বড় সব দরকারি কাজ বাতিল হয়ে যায় যার কারণে অনেকটা ব্যক্তিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
দেখুনঃ ভোটার আইডি অনলাইন কপি যাচাই ও ডাউনলোড করার নিয়ম
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
ভোটার আইডি কার্ডে ভুল কিভাবে হয়
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটার তথ্য হালনাগাদ করার সময় যারা হালনাগাদ করেন সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কারণে কখনো কখনো ভুল তথ্য উল্লেখিত হয়। যেমন যখন তারা আপনার তথ্য সংগ্রহ করবে তখন আপনার নাম ঠিকানা ঠিকভাবে সংগ্রহ করে না বরং ভুল লিপিবদ্ধ করে নিয়ে যায়, অনেক সময় সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে সংগ্রহ করলেও যারা নির্বাচন কমিশনের তথ্য ডাটা এন্ট্রি করে তাদের টাইপিং ভুলের কারণে ও ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংঘটিত হয়।
আজকাল সরকার এইসব কাজে এতটাই পরিমাণে ভুল ধরা পড়েছে যা ধারনার বাহিরে। কিন্তু বিগত দিনে যারা ভোটার নিবন্ধন তো হয়েছেন তাদের অনেকেই ভোটার আইডি কার্ড নাম, জন্ম তারিখ্পিতা মাতার নাম, ঠিকানা ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যার প্রধান কারণ হলো নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের অসাবধানতা এবং কাজের প্রতি অদক্ষতা।
বরাবর সব ভুল সংশোধন করা না গেলেও ভোটার আইডি কার্ডের কিছু কিছু ভুল আপনারা খুব সহজেই সংশোধন করতে পারবেন কয়েকটি নিয়ম তো চলুন জেনে আসি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম সমূহ
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
যাদের ভোটার আইডি কার্ড ভাই স্মার্ট কার্ডে বিভিন্ন তথ্য যেমন নাম, বয়স, ঠিকানা, পিতা মাতার নাম এবং ছবি সহ বিভিন্ন তথ্য ভুল লিপিবদ্ধ হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম -২ পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজ সহ নির্দিষ্ট ফি জমা প্রদান করতে হবে। এরপরে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন কার্যক্রম শুরু হবে।
এছাড়াও আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য আর একটি মাধ্যম রয়েছে সেটি হলো অনলাইনে সংশোধন আবেদন করা। সময় বাঁচাতে এবং অন্যান্য সুবিধার কারণে ঘরে বসেই আপনি অনলাইনে আবেদন করুন। এতে করে আপনার কষ্ট করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে না।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
এটি করার জন্য আপনার আইডি কার্ড নাম্বার দিয়ে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিবেন। এরপরে উক্ত একাউন্টে লগইন করে অ্যাকাউন্ট ইনফরমেশনে গিয়ে এডিট করার অপশন পাবেন। এডিট বাটনে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নির্দিষ্ট ফি প্রদানের অপশন গুলো দেখতে পাবেন এবং কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে সেটাও দেখতে পাবেন।
তাদের দেখানোর নিয়ম অনুসারে ফি প্রধান করারপরে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে সেখানে আপলোড করার মাধ্যমে আপনি আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করবেন, সংশোধন করার জন্য ফি জমা দেয়ার কিছুক্ষন পরেই আপনার একাউন্টে আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করার অপশন চালু হয়ে যাবে। এরপরে আপনার কাঙ্খিত ভুল সংশোধন করে সেভ করে দিতে হবে।
এখানে আপনার ভোটার আইডি কার্ড এর বিভিন্ন তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, বয়স জন্মতারিখ পিতা মাতার নাম, দেখতে পাবেন তবে আপনি যে অপশনটি সংশোধন করার জন্য ফি প্রদান করবেন একমাত্র সেই অপশনটি সংশোধন করতে পারবেন ।
ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন
জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্ট এর ফটোকপি প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে শুধু আপনার নামের কিছু অংশ পরিবর্তন করতে পারবেন অনেকেই নামের পদবী পরিবর্তন করতে চায় এ ক্ষেত্রে এটি করতে পারেন। আপনার জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই অনলাইনে থাকতে হবে।
আপনি যদি আপনার সম্পূর্ণ নামটি পরিবর্তন করতে চান তাহলে উপরোক্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এর সাথে একটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তিক প্রদত্ত এফিডেভিট হলফনামা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। একটি আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য যে যে ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয় তেমনি শুধু নাম পরিবর্তনে ক্ষেত্রেও একই ডকুমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে। সাথে প্রয়োজন হবে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি, ওয়ারিশ সনদপত্র, ইউনিয়ন বা পৌর বা সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রার্থীর নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র বা চাকরির বই বা এমপিও।
ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে ২৩০ টাকা ফি প্রদান বাবদ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুলো আপনাকে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম-২ এর সাথে সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন অফিসে। চাইলে অনলাইনে বসে করতে পারেন আপনি নিজেই।
ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার মধ্যে একটি ঝামেলা বিদ্যমান থাকে এটি সহজেই করা সম্ভব হয় না। বিভিন্ন ভেরিফিকেশন এর কারণে অনেক সময় ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধনের অনুমোদন দেয় না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নাম পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত লোকজন সরেজমিনে তদন্ত করে সেটি রিপোর্ট করবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সেখান থেকে তারা আপনার কাগজপত্র এবং তদন্ত বিবেচনা করে আপনাকে নাম পরিবর্তন করার জন্য অনুমোদন দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে যা যা প্রয়োজন
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ( বাধ্যতামুলক দিতে হবে ) যদি জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা না থাকে সেক্ষেত্রে নিন এরপর সাথে যোগাযোগ করে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করে নিবেন।
ন্যূনতম এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট ( আপনার যদি একটি না থাকে তাহলে অন্যান্য ডকুমেন্ট যেমন পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স , বৈবাহিক কাবিননামা, সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন অথবা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ইত্যাদি)
প্রয়োজন ক্ষেত্রে ওয়ারিশ সনদপত্র
ইউনিয়ন বা পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রত্যয়ন পত্র
ঠিকানা সংশোধন করার জন্য বাড়ির দলিল বা বিদ্যুৎ বিল বা অন্যান্য ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে
রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন করার জন্য ডাক্তারি সনদ প্রয়োজন হবে
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি
নরমাল ভোটার আইডি কার্ড অথবা স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন করার ক্ষেত্রে ডেলিভারী চার্জ সহ ২৩০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়। এছাড়াও আপনার ভোটার আইডি কার্ডে কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে সেটা জানতে পারবেন services.nidw.gov.bd/nid-pub/fees ওয়েবসাইটে গিয়ে।
অনলাইনে ফি প্রদান করার 30 মিনিট পরে আইডি কার্ড সংশোধন করার অপশন চালু হয়ে যাবে সংশোধন ফি দিতে পারবেন যে পেমেন্ট মাধ্যমে
- ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং রকেট মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
- ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড এবং ওকে ওয়ালেট মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে
- ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং টি-ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
- মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটেড।
- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড।
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে
আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য অনুমোদন পেয়ে গেলে অনলাইন থেকে সেটির সংশোধিত কঁপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধিত কপি সংগ্রহ করতে ২ মাস সময় লাগতে পারে।