নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ( ২০২৩ )
ভোটার আইডি কার্ড একজন মানুষের নাগরিক অধিকার। আপনার বয়স ১৮ হলে অবশ্যই আপনার ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধন করা উচিত। কেননা ভোটার আইডি কার্ড না থাকলে আপনি অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।আর আপনার যদি ভোটার আইডি কার্ড না থাকে তাহলে জানুন নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম বিস্তারিত।
এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা ও কি কি কাজে লাগে, ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম, কি কি ডকুমেন্টস লাগে, ভোটার আইডি কার্ড করতে কত টাকা লাগে ও কত সময় লাগে তার আদ্যোপান্ত।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা
একজন মানুষের জাতীয়তা ও ব্যক্তিগত স্বতন্ত্র পরিচয়পত্র হচ্ছে ভোটার আইডি কার্ড। দেশের নির্বাচন কমিশন এই ভোটার আইডি কার্ড প্রদান করে। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন চালু করা হয়।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম অনুযায়ী নতুনদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় ও ভোটার আইডি প্রদান করা হয়। এটি প্রতিটি মানুষের জন্য ইউনিক বা আলাদা হয়ে থাকে। তাই প্রতিটি মানুষের পরিচয়ভিত্তিক সঠিক তথ্যের জন্য ভোটার আইডি কার্ডের গুরুত্ব অনেক।
একজন মানুষের নাগরিকত্ব লাভ, বিভিন্ন প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাজে ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন। এছাড়াও একজন যোগ্য নেতা বাছাই করতেও এই ভোটার আইডি কার্ডের অধিকারীরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত পোষন করে। ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া একটি দেশের সামগ্রিক সুবিধা ভোগ করা যায়না।
ভোটার আইডি কার্ড কি কি কাজে লাগে
একটি ভোটার আইডি কার্ডের সাহায্যে দেশের নাগরিক হিসেবে অনেক সুযোগ – সুবিধা ভোগ করা যায়। যেমন-
- জাতীয় পরিচয় পাওয়া
- নাগরিক অধিকার ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারা
- জমি ক্রয় বিক্রয় কাজে পরিচয়পত্র প্রয়োজন
- ব্যাংক হিসাব খোলা
- ব্যাংক ঋণ নেওয়া
- চাকরির জন্য আবেদন
- বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করতেও মার্কেটপ্লেসে জাতীয় পরিচয় ভেরিফাই করতে হয়
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- মোটর যান ও গাড়ির মালিকানা রেজিস্ট্রেশন
- পাসপোর্ট করতে
- ভিসা পেতে ও অন্যান্য দেশে যেতে
- প্রশাসনিক সহায়তা পেতে
- ব্যবসায়ের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পেতে ও টিন সার্টিফিকেট করতে
- মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে
- সরকারি অনুদান ও বিভিন্ন ভাতা পেতে
মোট কথা একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য বাংলাদেশের সকল সুবিধা ভোগ করতে ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার ও ১৮ বছরের উপরে হলে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় বরাবর আবেদন করে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করা যায়। বর্তমানে ১৬ বছর হলেই ভোটার হওয়া গেলেও ১৮ বছরের নিচে ভোট দেওয়া যায় না। নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম মেনে ভোটার আইডির জন্য আবেদন করতে হয়।
সরকারি ভাবে প্রতি ৩ বছর পর পর ভোটার তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এসময় নিয়োগকৃত কর্মকর্তা বাড়ি বাড়ি ভ্রমন করে ভোটার লিস্ট করে এবং নিয়মানুযায়ী কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু যদি কেউ এই সময় ভোটার আইডি কার্ড না করে তাহলে অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড করতে হবে।
উপজেলা অফিস থেকে ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
- প্রথমেই ভোটার হালনাগাদে পরিচয় এন্ট্রি করতে হবে।
- উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইন থেকে নতুন ভোটার নিবন্ধন ফরম -২ সংগ্রহ করতে হবে।
- আবেদন ফরম নির্ভূলভাবে পূরন করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন, পিতা-মাতার তথ্য সহ অন্যান্য কাগজাদী পিনআপ করে নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
- উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবেদন টি যাচাই করে তা গ্রহনযোগ্য হলে নতুন ভোটার অনুমোদন দিবে।
- ভোটার অনুমোদন পাওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে বলবে। সেখানে আপনার আইডি কার্ডের ছবি তোলা হলে। এবং আপনার ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিস স্ক্যান করে রাখা হবে।
- তারপর Higher Authority এর (বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসে) কাছে প্রেরন করবে। তারপর আপনার ভোটার আইডি কার্ড তৈরি হয়ে যাবে।
অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া
ধাপ-১- ওয়েব সাইটে প্রবেশ
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করতে হলে প্রথমেই https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। এরপর আবেদন বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-২- নামও জন্ম তারিখ প্রদান
আপনার পুরো ইংরেজি নাম এবং আপনার জন্ম তারিখ প্রদান করুন এবং ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট ক্লিক করুন।
ধাপ-৩- মোবাইল নাম্বার
আপনার ব্যবহার কৃত মোবাইল নাম্বারটা দিন এবং সেটি ভেরিফিকেশন করুন
ধাপ-৪- ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড
একটি ইউনিক ইউজারনেম এবং একটি পাসওয়ার্ড সেট করুন পরবর্তীতে আপনার অনলাইন আবেদনটি পর্যবেক্ষণ এবং হালনাগাদ করার জন্য।
ধাপ-৫ ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান
একাউন্ট তৈরি করা হয়ে গেলে আপনি আপনার প্রোফাইলের লগিন হয়ে যাবেন এখান থেকে বিস্তারিত প্রোফাইল এ ক্লিক করে এডিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। এডিট বাটনে ক্লিক করে আপনার স্থায়ী অস্থায়ী ঠিকানা প্রদান করুন এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ।
ধাপ-৬- ফরম পূরণ ও উপজেলায় দাখিল
অনলাইন আবেদন ফরমটি সম্পূর্ণভাবে ফিলাপ করার পরে সিডিউল মতন আপনাকে ভোটার আবেদন ফরম ২ সংগ্রহ করতে হবে এবংআবেদন কপি টি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস সহ পিনআপ করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
তারপর আপনার আবেদনটি গ্রহন্যোগ্য হলে নির্বাচন অফিসার তা নতুন ভোটারের অনুমোদন দিবেন, এরপরে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আই স্কেন করে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। এখানে আপনাকে একটি ভোটার সিরিয়াল স্লিপ দেওয়া হবে। এটি সংরক্ষন করে রাখতে হবে।
পরবর্তী সময়ে উক্ত ভোটার স্লিপ এর মাধ্যমে আপনি ভোটার আইডি কার্ড চেক এবং ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে
ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে একজন মানুষের পরিচয় ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়। তাই নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম মোতাবেক এর জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়। এগুলো হলো-
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র সনদ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র। যাদের নেই তারা সংযোজন না করলেও হবে
- বিবাহিত হলে স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র কপি ও কাবিননামার কপি
- বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস যেকোন ইউটিলিটি বিলের কাগজ। পরিবারের যেকোন সদস্যের নামে হলেও হবে।
- চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র
- বিদেশি হলে পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
- নাগরিকত্ব সনদ
- একটি সচল মোবাইল ফোন নাম্বার
- উক্ত ডকুমেন্টস গুলো ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন কপির সাথে উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড করতে কত টাকা লাগে
সরকারি হালনাগাদ অনুযায়ী ভোটার আইডি করতে ১১৫ টাকা ফি প্রদান করতে হয়। তবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে আপনার আরও কিছু টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়াও NID কার্ড হলে তা অনলাইন থেকে উত্তোলন করতেও কিছু টাকা লাগে।
অন্যদিকে অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করলে বিকাশের মাধ্যমে ফি প্রদান করা যায়। এর জন্য-
- বিকাশের পে বিল অপশনে যাবেন।
- এবার NID Service সরকারি ফি সিলেক্ট করবেন।
- তারপর NID এর আবেদন নম্বর দিন।
- এবার এমাউন্ট ১১৫ টাকা দিয়ে আপনার বিকাশের কোড দিয়ে পে বিল এ ক্লিক করলেই ফি প্রদান হয়ে যাবে।
- তবে ইমার্জেন্সি ভোটার আইডি কার্ড প্রদানের কথা বলে কিছু লোক বড় এমাউন্টের টাকা হাতিয়ে নেয়। সে বিষয়ে সতর্ক থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম মোতাবেক আইডি কার্ড করুন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড কবে দিবে?
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম মেনে সঠিকভাবে আবেদন করার পর নির্বাচন অফিসার তা অনুমোদন দিলে ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটার আইডির কাজ শেষ হয়। এসময় আপনার মোবাইল নাম্বারে মেসেজ করে জানিয়ে দেওয়া হবে।
১৫ দিনের মধ্যেই অনলাইনে সেই ভোটার আইডি কার্ডের কপি বিতরন করা হয়। আপনার ভোটার আবেদন স্লিপের মাধ্যমে অনলাইন থেকে তা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে সকল কাজে ব্যবহার করা যাবে। তবে স্মার্ট কার্ড পেতে সময় লাগবে। যা পরবর্তীতে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
FAQ
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার সরকারি ফি ১১৫ টাকা। এছাড়াও আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে।
নতুন ভোটারের আবেদন করলে ১৫ দিনের মধ্যে অনলাইন কপি পাওয়া যায়। তবে মেইন স্মার্টকার্ড পেতে বেশি সময় লাগে।
প্রথমে, services.nidw.gob.bd এই সাইটে ভিজিট করে আপনার ভোটার স্লিপ নাম্বার, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার দিয়ে ফেইস ভেরিফাই করলে আপনার ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন কপি পাবেন।
শেষকথা
একটি দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনেক। তাই এই স্বাধীন দেশের সম্মান বুকে ধারন করতে ১৬-১৮ বছর বয়সী সকলেরই নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম জেনে ভোটার হওয়া উচিৎ।
আমাদের আজকের পোস্টের মূল বিষয় ছিলো নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম জানা। আপনাদের কে সঠিকভাবে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত করেছি।