জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি লাগে জানুন
একজন নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হবার পরে তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি লাগে এই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নিত্যদিনের বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনায় এবং চলাচলের পথে ভোটার আইডি কার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডের কোন তথ্যের ভুল থাকে সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব এটি সংশোধন করে নিবেন। অন্যথায় পরবর্তীতে এই ভুলের জন্য চড়া মাশুল গুনতে হতে পারে।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি লাগে
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং এডুকেশনাল সার্টিফিকেট সহ আবেদনকারীর বর্তমান পেশা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক এফিডেফিট, পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।
জাতীয় পরিচয় পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে প্রমাণ পত্র হিসেবে কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে। ভোটার আইডি কার্ডের ভুল অনুযায়ী তথা ভুলের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা ডকুমেন্টস প্রয়োজন হতে পারে।
অনলাইন কিংবা ম্যানুয়াল ভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার পরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি পরিশোধের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুলের ধরন অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি লাগে এই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি
একটি ভোটার আইডি কার্ড সর্বোচ্চ তিনবার সংশোধন করতে পারবেন।
পর্যায় | সংশোধন ফি | ভ্যাট |
---|---|---|
১ম বার | ২০০ টাকা | ৩০ টাকা |
২য় বার | ৩০০ টাকা | ৪৫ টাকা |
৩য় বার | ৫০০ টাকা | ৭৫ টাকা |
জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে
যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নামে বা আপনার পিতা-মাতার নামে কোন ধরনের ভুল থাকে সেক্ষেত্রে এগুলো সংশোধন করতে আবেদন ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে ও আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে।
নাম সংশোধনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স/ পাসপোর্ট/ নিকাহ-নামা/ এমপিও সিট/ সার্ভিস বই (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- এসএসসি/ পিএসসি/ জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট ( প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- অফিস প্রত্যয়ন পত্র (চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে)
- এই একই পদ্ধতিতে আপনারা পিতা-মাতার নাম সংশোধন করতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয় পত্র জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কি কি লাগে
আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ ভুল হলে সংশোধন করতে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস আবেদনপত্রের সাথে সাবমিট করতে হবে এবং সংশোধন ফ্রি পরিশোধ করতে হবে।
জন্ম তারিখ সংশোধনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রাপ্ত এফিডেভিট।
- এসএসসি/ পিএসসি/ জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট ( প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- পিতার অন্যান্য সন্তানের তথ্য প্রমাণের জন্য ওয়ারিশ সার্টিফিকেট।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স/ পাসপোর্ট/ নিকাহ-নামা/ এমপিও সিট/ সার্ভিস বই (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধনের কারণ সম্পর্কে আবেদনকারীর লিখিত বক্তব্য।
- নাগরিক সনদপত্র (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে অফিস প্রধান কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র।
নাম পরিবর্তন করতে কি কি লাগে
বর্তমান সময়ে সাধারণত নাম পরিবর্তন জাতীয় সমস্যা গুলো হয় না। তবুও যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম ভুল আসে তথা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস এবং আবেদন ফি জমা করতে হবে।
নাম পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- -মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
- জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রাপ্ত এফিডেভিট।
- এসএসসি/ পিএসসি/ জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট ( প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- ড্রাইভিং লাইসেন্স/ পাসপোর্ট/ নিকাহ-নামা/ এমপিও সিট/ সার্ভিস বই (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- নাগরিক সনদপত্র (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- পিতার অন্যান্য সন্তানের নাম ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণের জন্য ওয়ারিশ সার্টিফিকেট।
- নাম পরিবর্তন এর কারণ সম্পর্কিত লিখিত বক্তব্য।
- চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে অফিস প্রধান কর্তৃক প্রত্যয়ন।
- একই পদ্ধতিতে আপনারা পিতা ও মাতার নাম পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ/এডুকেশনাল সার্টিফিকেট অনুযায়ী নুতন নাম সিলেক্ট করতে হবে।
স্বামী/ স্ত্রীর নাম সংযুক্ত বা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে
খুব সহজ পদ্ধতিতে স্বামী/ স্ত্রীর নাম সংযুক্ত বা বাতিল এবং পরিবর্তন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আবেদন ফরম এর সাথে অল্প কিছু ডকুমেন্ট এবং আবেদন ফি সংযুক্ত করে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো হলো
- স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- বিবাহ নামা তথা কাবিননামা (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- তালাকনামা/মৃত্যু সনদ (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিকানা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে
যদি আপনি ভুল ঠিকানায় জাতীয় পরিচয় পত্র করেন অথবা আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে আবেদন ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে।
এক ভোটার এলাকা হইতে অন্য ভোটার এলাকায় ভোটার স্থানান্তরের আবেদন (ফরম-১৩) পূরণ করে নিম্নোক্ত ডকুমেন্ট সংযুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে দাখিল করতে হবে।
ঠিকানা পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- উপজেলা কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র।
- এরপরেও ঠিকানা প্রমাণের জন্য যদি কোন ধরনের ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয় তাহলে নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা এ বিষয়ে আপনাকে অবগত করবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করবেন যেভাবে
আপনারা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরম ২ পূরণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ যেমন পূর্বের ভুল তথ্য এবং সংশোধিত তথ্য উল্লেখ করে সংশোধিত ডকুমেন্ট অর্থাৎ প্রমাণ পত্র সংশোধন ফ্রম এর সাথে সংযুক্ত করে নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে দাখিল করুন।
এছাড়া অনলাইনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ডে যাবতীয় তথ্যগুলো সংশোধন করতে প্রথমে https://services.nidw.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনার অ্যাকাউন্ট লগইন করুন অথবা নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন।
এরপরে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো প্রদান করে ভুল এবং সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে আবেদন ফ্রি পরিশোধের মাধ্যমে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন পত্র সাবমিট করুন। পরবর্তীতে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে নির্বাচন অফিসে জমা করুন।
উক্ত পদ্ধতির ব্যবহার করে অনলাইনে সহজ উপায়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে পারবেন।
সংশোধন সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত তথ্য
- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম
- জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম
- ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করার নিয়ম