জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় জানুন
একজন নির্দিষ্ট মালিকের থেকে যখন অন্যজনের নামে জমি হস্তান্তর করা হয় তখন জমির রেকর্ড করা প্রয়োজন হয়। জমি জমা সংক্রান্ত আমাদের একটি কমন প্রশ্ন হল জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় ? আশা করি এই লেখাটি সম্পূর্ণ দেখলে এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
আমরা জানি বাংলাদেশে প্রতি ৩০ বছর পরে জমির জরিপ করা হয়। এই জরিপে জমি রেকর্ড ও অন্যান্য তথ্যগুলো চেক করা হয়। কোন জমি রেকর্ড করানের পূর্বে আমাদের অবশ্যই জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় তা জানা প্রয়োজন। চলুন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয়
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি ৩০ বছর পরে জমির রেকর্ড করা হয়। জমির মূল মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পরে উক্ত জমির দলিলকে সেরা ডকুমেন্টস হিসেবে ধরা হয়। তাই প্রতি ৩০ বছর পর পর জমির রেকর্ড সংযোজন ও সংশোধন করা হয়।
যেকোনো জমির ক্ষেত্রে জমির রেকর্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন সরকারি পর্যায়ে জমি রেকর্ড করা হয় তখন যদি জমির দলিলে থাকা মালিকানা ব্যক্তির কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে উক্ত জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে দলিলে থাকা ব্যক্তিকে ধরা হয়।
বাংলাদেশের প্রতি ৩০ বছর পর পর জমির জরিপ করা হয়ে থাকে, তাই বলা যায় প্রতি ৩০ বছর পর পর জমির রেকর্ড হয়। জমি রেকর্ডের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের এই বিষয়টা জানা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি জমির ক্ষেত্রে জমির রেকর্ড অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
জমির রেকর্ড কি? এবং কেন করা হয়?
সরকারি খাতায় জমির মালিকানা নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে জমির রেকর্ড বা নামজারি বলা হয়। সাধারণত জমি ২ ধরনের হয়ে থাকে।
- কৃষি জমি
- নির্মিত মান বা বাসা বাড়ি, ব্যবসায়িক দোকান ইত্যাদি
যখন কোন জমির মালিকানা নাম পরিবর্তন করা হয়, তখন তার সাথে সাথে জমির রেকর্ড বা নামজারি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। কেননা মালিকানা পরিবর্তনের সময় যদি রেকর্ড পরিবর্তন করা না হয় তাহলে সরকারি খাতায় উক্ত জমির মালিকানা পূর্বের মালিকের নামে থেকে যায়।
জমির রেকর্ডের মাধ্যমে সরকারি খাতায় মালিকানা তথ্য উল্লেখ থাকে। তাই কোন জমি ক্রয় বা বিক্রয়ের পরে সাব রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে জমির রেকর্ড পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় জমির পুরনো মালিকের নাম রেকর্ড খাতায় থেকে যাবে।
বাংলাদেশে প্রতি ৩০ বছর পর পর জমির রেকর্ড সংশোধন বা সংযোজন করা হয়। যেকোনো জমির মালিকানা পরিবর্তনের পরে সেই জমির দলিল সর্বোচ্চ ডকুমেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়।
জমি রেকর্ড করতে কি কি প্রয়োজন
জমির রেকর্ড করার ক্ষেত্রে আপনাদের কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে। অবশ্যই জমির রেকর্ড এর জন্য সাব রেজিস্ট্রেশন অফিসে প্রবেশের পূর্বে উক্ত ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করে নিবেন। চলুন জেনে নেই জমি রেকর্ড করতে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন।
- জমি রেকর্ড এর জন্য আপনার কাছে উক্ত জমির বৈধ দলিল থাকতে হবে।
- BLRO এর অফিস থেকে একটি জমি রেকর্ড ফরম সংগ্রহ করে নিবেন।
- এরপরে কোর্টের নিকট থেকে এফিডেভিট সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নিবেন।
- তারপরে আপনার প্রোপার্টি ট্যাক্সর রশিদ প্রয়োজন হবে।
- যদি এই জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন তাহলে মূল মালিকের ডেথ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
- যদি জমি অগ্রিম উইল করে থাকে তাহলে, উইল এর জেরক্স কপি তে সত্যায়িত করার প্রয়োজন হবে।
এই ডকুমেন্টসগুলো ব্যতীত যদি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় তা আপনাকে সাব রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডকুমেন্টসগুলো নিয়ে জমি রেকর্ড করতে পারবেন।
জমি রেকর্ড সংশোধন করার গুরুত্ব
নামজারি বা জমির রেকর্ড সংশোধন করার পিছনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি রয়েছে। যেমন কৃষি জমির ক্ষেত্রে জমির দলিল ফাইনাল ডকুমেন্টস হিসেবে ধরা হয় না এক্ষেত্রে জমির রেকর্ডকে ফাইনাল ডকুমেন্টস হিসেবে ধরা হয়।
এছাড়াও জমিজমা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষার জন্য জমির রেকর্ড করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। জমি ক্রয় বা বিক্রয়ের পরে সাব রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে জমির রেকর্ড সংশোধন না করলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পূর্বের মালিককে জমির আসল মালিক হিসেবে ধরা হয়।
এক্ষেত্রে পুরনো মালিকের ইচ্ছে অনুযায়ী তিনি চাইলে উক্ত জমিকে পুনরায় অন্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করতে পারে। তাই জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই রেকর্ডের দিকে নজর রাখবেন। অন্যথায় বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের শেষকথা
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আশাকরি জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় এবং জমির রেকর্ড করতে কি কি প্রয়োজন ও জমির রেকর্ড সংশোধন করার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। জমি ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই জমির রেকর্ডের দিকে খেয়াল রাখবেন।