প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
আপনি নিজের পরিবারের অথবা অন্য কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করতে পারবেন ঘরে বসে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় দেশব্যাপী পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী নাগরিকদের প্রদত্ত ভাতা। ১৯৬১ সালে সমাজসেবা পরিদপ্তর গঠিত হয় যা বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তরে রূপ নিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থ G2P অর্থাৎ Government to Person পদ্ধতিতে প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ব্যবস্থায় বিনা ভোগান্তিতে দুর্নীতি মুক্ত উপায়ে সরকারি অনুদান প্রদান করা হচ্ছে।
আপনি যদি এ সরকারি ভাতা গ্রহণের জন্য যোগ্য হয়ে থাকেন তাহলে খুব সহজেই ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন। আজকের এই প্রবন্ধে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন
যদি কেউ প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির জন্য যোগ্য হয়ে থাকে তাহলে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে http://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication ওয়েব সাইটের প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন ফর্ম পূরণ করে সহজেই আবেদন করতে পারবেন। এরপর ফরমটি প্রিন্ট করে সেখানে স্থানীয় চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলর এর স্বাক্ষর নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সামাজসেবা অফিসে জমা দিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ২৩,৬৫,০০০ জন প্রতিবন্ধী নাগরিককে প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছে। সেবামূলক এ কার্যক্রম শহর থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। চলুন এবার প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করার পুরো প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদনের যোগ্যতা
প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করার পূর্বে আপনাকে জেনে নিতে হবে আবেদনকারী এ ভাতা প্রাপ্তির জন্য যোগ্য কিনা। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদনকারীর যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে তা হলঃ
- আবেদনকারীকে গরিব ও দুস্থ প্রতিবন্ধী হতে হবে
- আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ অনুযায়ী আবেদনকারীকে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র গ্রহণ করতে হবে
- আবেদনকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা, তাকে সেই জেলা থেকে নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র গ্রহণ করতে হবে
- আবেদনকারীর মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৬,০০০ (ছত্রিশ হাজার) টাকার নিচে হতে হবে
- বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে
- ৬ (ছয়) বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ভাতা প্রদানের জন্য বিবেচনা আনতে হবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির অযোগ্যতা
নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয়ের এক্ষেত্রে একজন প্রতিবন্ধী নাগরিক ভাতা প্রাপ্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সেগুলো হলঃ
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সরকারি কর্মচারী হলে বা সরকারি কর্মচারী হিসেবে পেনশনভোগী হলে প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন না
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্য কোনো সরকারি কর্মসূচির আওতায় অনুদান প্রাপ্ত হলেও প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন না
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কোনো বেসরকারি সংস্থা বা সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা পেলে সেই ব্যক্তি প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন না।
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে হলে জাতীয় পরিচয় পত্র
- আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয় পত্র বা সুবর্ণ নাগরিক কার্ড
- নগদ বা বিকাশ একাউন্ট সহ একটি সক্রিয় মোবাইল নাম্বার
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম –
প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য যদি আপনি সকল শর্ত পূরণ করে থাকেন,তাহলে উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিন। তারপর আপনাকে যা যা করতে হবে তা হলঃ
ধাপ ১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমেই আপনার পছন্দমত সার্চ ইঞ্জিন বা Google Chrome এ প্রবেশ করুন। তারপর এই লিংকের মাধ্যমে http://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication , এই একই লিংক এর মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা আবেদন করা যায়।
সমাজসেবা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
ধাপ ২. আবেদনের জন্য পরবর্তী ধাপ অনুসরণ
এরপর নিচের ছবিটির মতো একটি পেজ দেখতে পাবেন। পেজের নিচের দিকে “আমি বুঝেছি,পরবর্তী ধাপে যান” লেখা দেখতে পাবেন। এই লেখাটির সামনে টিক দিন এবং এই লেখার উপর চাপ দিন।
ধাপ ৩. প্রতিবন্ধী ভাতা নির্বাচন
কার্যক্রম অপশনে গিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা নির্বাচন করুন। শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা নিবন্ধন কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে এখানে প্রতিবন্ধী থাকা অপশনটি দেখতে পাবেন, এছাড়া অন্য সময় বয়স্ক ভাতা আবেদন অপশন দেখতে পাওয়া যাবে। এখানে প্রতিবন্ধী বাছাই করে ডান পাশের সংরক্ষণ অপশনে চাপ দিন।
ধাপ ৪. পরিচিতি প্রদান
এবার ব্যক্তিগত তথ্যের নিচে জাতীয় পরিচিতি নম্বর বা জন্মনিবন্ধন নির্বাচন করুন। তারপর সেই অনুযায়ী নম্বর ও জন্মতারিখ লিখে খালি ঘর পূরণ করুন। এরপর যাচাই করুন অপশনে চাপ দিন।
ধাপ ৫. ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান
এরপরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ হয়ে যাবে। সেসব ঘর খালি থাকবে সেসব ঘরের তথ্য আপনাকে আলাদা ভাবে লিখে পূরণ করতে হবে।
ধাপ ৬. অন্যান্য তথ্য প্রদান
এরপর অতিরিক্ত আরও কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। যথাঃ
- বৈবাহিক অবস্থা
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা
- পেশা
- বার্ষিক আয়
- স্বাস্থ্য বা কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্য
- সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য
- বাসস্থানের তথ্য
- ভূমির পরিমাণ
- প্রতিবন্ধীর ধরন কোড ( ডিআইএস অনুযায়ী)
- প্রতিবন্ধীর মাত্রা ( ডিআইএস অনুযায়ী)
ধাপ ৯. যোগাযোগের তথ্য প্রদান
এই ধাপে আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য উল্লেখ করতে হবে। এখানে আপনার বিভাগ জেলা উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড , এবং আপনি যেই নাম্বারে ভাতার টাকা নিতে চান উক্ত মোবাইল নাম্বার এবং মোবাইল নাম্বারের মালিকানা উল্লেখ করতে হবে।
ধাপ ৮. আবেদন প্রিন্ট
আবেদন ফর্মে এসব তথ্য প্রদানের পর ভালো মত দেখে নিন কোনো ভুল আছে কিনা। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হবার পর সংরক্ষণ বাটনে চাপ দিন। তারপর প্রিন্ট অপশনে গিয়ে আবেদন পত্রটির pdf file ডাউনলোড করে তা প্রিন্ট করে নিন। নিজস্ব প্রিন্টার না থাকলে এলাকার কোনো কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিন।
ধাপ ৯. সমাজসেবা অফিসে ফরম জমা
সবশেষে প্রিন্ট করা ফরমটির নির্দিষ্ট অংশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিতে হবে। স্বাক্ষর নেওয়ার পর সমাজসেবা মাঠকর্মী বা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে ফরমটি জমা দিতে হবে। ফরমের সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দিতে হবে। এরপর যদি আবেদনকারী এ ভাতা প্রাপ্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হয় তাহলে সে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আর্থিক অনুদান গ্রহণ করতে পারবে।
প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা
উত্তরঃ ২০২২-২৩ অর্থ বছর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হয়েছে।
উত্তরঃ প্রতিবন্ধী ভাতা ৩ মাস পরপর দেয়া হয়।
উত্তরঃ একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি একের অধিক বার আবেদন করতে পারবেন না। এরকম ক্ষেত্রে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।
এছাড়া যারা সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক অন্যান্য ভাতা যেমন বয়স্ক ভাতা, হিজরা জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা, বেদে জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা, হিজরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা উপবৃত্তি, বেদে জনগোষ্ঠীর শিক্ষা উপবৃত্তি, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ভাতা পাচ্ছেন তারা এ প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
শেষ কথা
দেশের প্রতিবন্ধী নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা দেয়ার লক্ষ্যে তাদের সরকারি ভাতা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকারের এসব সামাজিক কর্মসূচি দেশের মানুষের উন্নয়নে অবদান রাখছে।
১৯৫৫ সালে সমাজকল্যাণ মূলক কার্যক্রম শুরু হয়। যার হাত ধরে সমাজসেবা অধিদফতরের জন্ম হয়। প্রতিবছর সমাজসেবা অধিদফতর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করার সময় জানানো হয়ে থাকে। আপনাকে উক্ত সময়ের মধ্যে এ আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার পর যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির জন্য যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করা হয়ে থাকে। অতঃপর মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধার মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা হয়।
আশা করা যায়, উপরোক্ত নিয়মাবলি সঠিকভাবে অনুসরণ করে আপনিও প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যদি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হন তাহলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।