অনলাইনে ঋণ আবেদন করার প্রক্রিয়া
বর্তমানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। এখন ঘরে বসেই যেমন নিমিষের মধ্যে নিত্তদিনের বিভিন্ন কাজ যেমনঃ খাবারের অর্ডার দেয়া যায়, বিল পরিশোধ করা যায় তেমনি অনলাইনে ঋণ আবেদন করা যায় বিভিন্নভাবে।
বিপদের সময় অনেক ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের বিশাল অংকের টাকার প্রয়োজন হতে পারে, সেসময় এই অনলাইন ঋণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি খুব বেশি ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনে ঋণ পেতে পারেন। আগে যেখানে সাধারণভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হত, সেখানে বর্তমানে ডিজিটাল সময়ে অনলাইনে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া বেশ সহজ।
বাংলাদেশে একাধিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিকাশ, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক এই ডিজিটাল লোন বা অনলাইন ঋণ দেয়ার সুবিধা চালু করেছে। চলুন তাহলে এবার আজকের আলোচনায় জেনে নেই কোন প্রতিষ্ঠান কীভাবে অনলাইন ঋণ প্রদান করছে এবং আপনি কীভাবে ঘরে বসেই এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন ঋণ আবেদন করার উপায়
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সবার ফোনেই বিকাশ অ্যাপটি রয়েছে। কেননা বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতে হয়। অ্যাপের মাধ্যকে এসব কাজ করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। সবার ফোনে থাকা এই বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে ঋণ নেয়ার জন্য আবেদন করা যায়।
বিকাশ ব্যবহারকারীদের কাছেই রয়েছে ঘরে বসে লোন পাওয়ার সুবিধা যা সিটি ব্যাংকের সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে বিকাশ দিয়ে থাকে। আপনি যদি বিকাশ গ্রাহক হয়ে থাকেন তাহলে কোনো কাগজপত্র ছাড়াই যেকোনো মুহূর্তে এই লোন নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিকাশ থেকে এই অনলাইন ঋণ নেয়ার সুবিধা হল-
- আপনি লোনের জন্য আবেদন করার সাথে সাথেই তা পাবেন
- এটি একটি তিন মাস মেয়াদী লোন
- এই লোন নেয়ার জন্য কোনো ব্যাংক একাউন্ট বা জামানতের প্রয়োজন নেই
- আপনাকে কোনো কাগজ-পত্র দাখিল করতে হবে না
- আপনি বিকাশ একাউন্ট ব্যালেন্স থেকেই অটো-কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন
- এই লোনের উপর ব্যাংক প্রসেসিং ফি মাত্র ০.৫৭৫% (০.৫% + ভ্যাট)
আপনি বিকাশ অ্যাপে ঢুকলে হোম পেজেই send money, payment ইত্যাদি অপশনের নিচে loan লেখা অপশনটি দেখতে পাবেন। সেখানে চাপ দিলে যদি আপনি লোন নেয়ার জন্য উপযুক্ত হন তাহলে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে পারবেন। আর আপনি উপযুক্ত নাহলে আপনাকে নিয়মিত বিকাশ ব্যবহার করতে বলা হবে। বিকাশ গ্রাহক হিসেবে আপনি লোন নেয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা সিটি ব্যাংক থেকে লোন পাবেন কি না তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি ব্যাংক কর্তৃক সংরক্ষিত পলিসি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
যদি আপনি লোন নিতে পারেন তাহলে তা আপনার বিকাশ একাউন্টে জমা হবে। তারপর আপনি বিকাশ একাউন্ট থেকে এই লোনের টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে আপনার জেনে রাখা দরকার যে, একজন গ্রাহক একবারে একটি লোনই নিতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক-এর নির্দেশনা অনুযায়ী লোন অ্যামাউন্টের উপর বাৎসরিক ৯% ইন্টারেস্ট রেট প্রযোজ্য হবে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনলাইনে বিকাশ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে।
- বিস্তারিত দেখুন বিকাশ থেকে ১০ হাজার টাকা লোন নেওয়ার উপায়
লোন পরিশোধের নিয়মাবলি
লোনের জন্য আবেদন করার সময় ও লোন পাওয়ার পর বিকাশের ড্যাশবোর্ড-এ আপনি লোন কিস্তির পরিমাণ ও পরিশোধের তারিখ দেখতে পাবেন। আপনি চাইলে লোন পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখে আপনার বিকাশ একাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অটো ডেবিট হিসেবে পরিশোধ করতে পারেন।
অথবা, নির্দিষ্ট দিনের আগে নিজেই লোনের অর্থ পরিশোধ করতে পারেন, যার ফলে ইন্টারেস্টের খরচ কমে আসার সুবিধা পেতে পারেন।আর যদি আপনি নির্দিষ্ট তারিখে লোনের অর্থ পরিশোধ না করেন তাহলে বিলম্ব ফি প্রদান করতে হবে। বিলম্ব ফি’র হার লোনের পরিমাণের উপর বাৎসরিক ২%।
ব্যাংক এশিয়ায় অনলাইন ঋণ নেয়ার আবেদন করার উপায়
যদি আপনার ব্যাংক এশিয়ায় একাউন্ট থেকে থাকে তাহলে খুব সহজেই ব্যাংক এশিয়ার মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ছয় মাস মেয়াদী ন্যানো লোন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি ৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।
ঝণ এর আবেদন গ্রহণের সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবশ্যই গ্রাহকের ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট ও মেটা ডাটা পর্যালোচনা করে দেখবে। গ্রাহকের ক্রেডিট স্কোরিং এর উপর লোন এর পরিমাণ নির্ভর করবে।
ঢাকা ব্যাংক থেকে অনলাইনে ঋণ নেয়ার উপায়
ঘরে বসে গ্রাহকদের অনলাইনে লোন সুবিধা দেয়ার জন্য ঢাকা ব্যাংক নিয়ে এসেছে eRin অ্যাপ। eRin অ্যাপ ব্যবহার আপনি কোনো ধরনের কাগজপত্রের ঝামেলা ছাড়াই এই ঋণ নিতে পারবেন। ঢাকা ব্যাংকের eRin অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।
অনলাইনে ঝণ এর জন্য আবেদন করার মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যেই এই ঋণ পাওয়া যাবে। আপনি দেশের যেকোনো স্থান থেকে দিনরাত ২৪ ঘন্টার যেকোনো সময় eRin অ্যাপ ব্যবহার করে ঝণ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য প্রথমে মোবাইলের ডাটা বা ওয়াইফাই কানেকশন অন করে গুগল প্লে স্টোর চালু করুন। তারপর সার্চ বারে eRin লিখুন। অ্যাপটি ইনস্টল করার পর আপনার
ঢাকা ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে ভেরিফিকেশন করে নিন। এরপর NID তথ্য ও KYC ডকুমেন্ট দিয়ে ডিজিটাল ঋণ নেয়ার জন্য আবেদন করুন। আপনি যদি একজন পেশাদার ব্যক্তি, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক ব্যক্তি এবং সর্বনিম্ম ১০ হাজার টাকা বেতন পান এমন ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ই ঋণের সুদের হার ও পরিশোধের সময়
- বাৎসরিক সর্বোচ্চ সুদের হার ৯.১৫%
- সর্বমিন্ম ৩ মাস মেয়াদী ঋণ
- সর্বোচ্চ ৬ মাস মেয়াদী ঋণ
মাসিক ঋণের বিবারণ
- ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা
- সুদ ৯%
- মেয়াদ ৬ মাস
- পরিশোধিত সুদের পরিমান ৪৫০ টাকা
- প্রসেসিং ফি ১৭২.৫০ টাকা
- মাসিক পরিশোধিত ঋণের পরিমান ১৭৪১ টাকা
- সর্বমোট পরিশোধিত ঋণের পরিমান ১০২৮৯ টাকা
বাৎসরিক ঋণের বিবারণ
- লোনের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা
- ৩ মাস মেয়াদী সুদ
- বাৎসরিক ৯% সুদ
- তিন মাসের জন্য সুদের হার ২.২৫%
- সুদের পরিমান ২২৫ টাকা
- VAT ১৫% ৭.৫ টাকা
- অন্যান্য ১৭২.৫০ টাকা
- সর্বোচ্চ APR ৯.১৫%
ব্র্যাক ব্যাংকে অনলাইনে ঋণের আবেদন – ‘সুবিধা’ অ্যাপ
ব্র্যাক ব্যাংক এর সুবিধা নামক অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে ঋণ প্রদান করে থাকে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনি এই ডিজিটাল লোন এর জন্য ৩ থেকে ১৮ মাস মেয়াদী লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বার্ষিক ৯% সুদ এই লোনের উপর প্রযোজ্য হবে। অন্যান্য ডিজিটাল লোনের তুলনায় ব্র্যাক ব্যাংক থেকে বড় অংকের লোন পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ
বাংলাদেশ ব্যাংক এর ডিজিটাল ক্ষুদ্রঝণ ব্যবস্থা থেকে আপনি সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। ব্যাংকের নিজস্ব ১০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে এই ঝণ দেয়া হয়। সর্বোচ্চ ৬ মাস মেয়াদী এই ঋণ বিভিন্ন ইন্টারনেট ব্যাংকিং যেমন বিকাশ, নগদ, ইত্যাদি সেবার মাধ্যমে । যেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই লোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবে তারা তাদের অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করে লোন প্রদান করবে। এই লোন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রদান করা হলেও তা গ্রহণ করতে হবে ব্যাংক বা এমএফএস এর মাধ্যমে। ক্ষুদ্র ঋণ আবেদন ফরম পূরণ করার মাধ্যমে আপনারা ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শেষ কথা
আশা করি, বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন অনলাইনে বা ডিজিটাল লোন সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন এবং উপরোক্ত পন্থা অনুসরণ করে যথানিয়মে আপনিও অনলাইনে ঋণ আবেদন করতে পারবেন। তবে জেনে রাখা ভালো যে, আপনি যদি উক্ত ব্যাংকের রেগুলার ব্যবহারকারী না হন তাহলে বড় অংকের লোন পাবেন না।
আপনার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে-