বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য ( নমুনা সহ )
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কিভাবে প্রদান করতে হয় তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। বক্তব্য দিতে গিয়ে ঠিক কোন কথাগুলো বলতে হবে সেটি আমরা অনেকেই জানিনা।
বিদায় অনুষ্ঠান সাধারণত একটি বিদ্যাপীঠের কোন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে সেই বিদ্যাপীঠ এর সাথে শেষ অনুষ্ঠান । যেটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাথে ঘটে উক্ত বিদ্যাপীঠ এর বিচ্ছেদ, এবং এর সাথে শিক্ষার্থীদের শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
সাধারণত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসি শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান, এইস এস সি বিদায় অনুষ্ঠান , অথবা মাস্টার শিক্ষার্থীদের বিদায়ী অনুষ্ঠান গুলো মূলত জুনিয়ার ব্যাচ গুলো আয়োজন করে থাক এবং তারাই অনুষ্ঠানগুলোর উপস্থাপনা করে থাকে।
সাথে বিদায়ী স্মৃতি চরণে বিদায়ী ব্যাচের কয়েকজন ছাত্র বা ছাত্রী বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখেন। আর বক্তৃতা রাখতে গিয়ে কোন কথাটি বলতে হবে কিভাবে বক্তব্য প্রদান করতে হবে কোন কথাটি বললে মানুষ ইমোশনাল হয়ে যাবে, অথবা কি সব বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষক মন্ডলী, ছাত্র-ছাত্রী ভাই বোনদের মন কেড়ে নেওয়া যাবে তা আমরা অনেকেই জানিনা।
সাধারণত একটি বিদ্যাপীঠ এর সিনিয়র শিক্ষার্থী যাদের পাঠদান চুকে গেছে উক্তবিদ্যাপীঠ থেকে, তাদের উদ্দেশ্য করে উক্ত বিদ্যাপীঠের জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীগণ তাদের বিদায় এর উদ্দেশ্যে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত থাকেন বিশেষ অতিথি উপস্থিত থাকেন এবং উপস্থিত থাকেন উক্ত বিদ্যাপীঠ প্রাণ প্রিয় শিক্ষক মন্ডলী, এরপরে পুরো বিদ্যাপীঠের জুনিয়র শিক্ষার্থীগণ তো থাকেন ই।
সাধারণত প্রধান শিক্ষক অথবা উক্ত বিদ্যাপীঠ এর সভাপতি উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব দায়িত্ব পালন করে থাকে। তারপর সেখানে যারা উপস্থাপনা করে তারা উক্ত অনুষ্ঠানের কমিটি দের নাম ঘোষণা করে। তোর সবমিলিয়ে একটি পুরো বিদায়ঘণ্টা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
এখানে বক্তব্য রাখেন সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, শিক্ষক মন্ডলী, এবং জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা। এখানে কার বক্তব্যটি ঠিক কেমন হবে, বিদেশি ভাষার বক্তব্য গুলো মূলত অন্য রকম হয়ে থাকে। যে ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় শিক্ষকের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের কাটানো মুহূর্তগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাটানো শিক্ষার্থীদের বিশেষ সময় গুলো।
এর সাথে তুলে ধরা হয় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুনাগুন যার দ্বারা প্রকাশিত হয় উক্ত শিক্ষার্থীগণ বিদ্যালয়ের প্রতী কতটা ঋণী। বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য গুলো সাধারণত এই ধরনের হয়ে থাকে। যারা জানেননা বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য কিভাবে দিতে হয় কোন কথাগুলো বলতে হয় তারা আজ শিখতে পারবেন বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য শুরুতে কি বলতে হয় এবং বক্তব্যের মাঝে কোন কথা গুলো বলতে হয় এবং কি বলে বক্তব্য শেষ করতে হয়।
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলেই উক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ পূর্বক উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত সভাপতি এবং অতিথিগণের প্রতি সালাম রাখবেন। এরপরে প্রথমেই একটি বিদায়ী ছন্দ বলার চেষ্টা করবেন। তার পরে আপনার মূল বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য প্রদান করবেন ।
বিদায়ী বক্তব্য এমন ভাবে প্রদান করতে হবে যেন উপস্থিত সকলের চোখে পানি চলে আসে। এমন ভাবে বক্তব্য দেওয়া উচিত যেখানে বক্তব্যের মাঝে সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া যায় আপনারা উক্ত বিদ্যাপীঠ এর প্রতি কতটা ঋণি এবং ওখানের পাওয়া ভালোবাসাগুলো আপনাদের কিভাবে অনুপ্রাণিত করেছে, উক্ত বিদ্যাপীঠের মায়ায় আপনারা কতটা জর্জরিত এটি প্রকাশ করতে হবে বিদায়ী বক্তব্যে।
আপনাদের কাটানো সময় গুলোতে বিদ্যমান বিভিন্ন ভুলত্রুটি গুলো মাফ চাইতে হবে শিক্ষার্থী বৃন্দ দের কাছে। মনে রাখবেন বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য গুলো ঠিক এমন কঠোর হওয়া চাই যেমন বক্তব্য আপনি আর কখনোই দিবেন না। এমন একটি জিনিস আপনি ছেড়ে যাচ্ছেন যেটি আর কখনো ফিরে পাবেন না বক্তব্যটি ঠিক এমন অশ্রুসিক্ত হওয়া চাই।
বিদায় বক্তব্য শেষ করতে হবে সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সবার কাছে দোয়া এবং প্রার্থনা চাইতে হবে যাতে আপনাদের ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর হয় ।
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। অদ্যকার স্কুল কর্তৃক আয়োজিত এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০২২ সালের বিদায়ী অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপবিষ্ট সম্মানিত সভাপতি, অভিভাবক।
সামনে উপস্থিত শ্রদ্ধেয় এবং প্রাণের ছোট-বড় শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা। সকলের প্রতি রইলো আমার আন্তরিক সালাম ও অভিবাদন।
” বিদায়ের বেদনায়
জলে ভেজা চোখ,
দৃষ্টিতে তবু তুমি
চেয়ে থাকি অপলক ”
হে স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠঃ তুমি কত সুন্দর দৃষ্টিনন্দন জানিনা । তবে তোমার সু- ক্ষ্যাতি অঞ্চল ব্যাপী। তোমার মত স্বনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত। তোমার যে মনোরম পরিবেশ অবস্থান, কোমলমতি পাঠদান তা আমার অন্তরে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলীঃ জানার ব্যাপারে আপনারা ছিলেন মহীরুহ বৃক্ষ। শিখনের ক্ষেত্রে আপনাদের ছিলো আমায় কথায় প্রকাশ। সদ্য ডিম থেকে ফুটে ওঠা বাচ্চা পাখির মুখে যেমন মা পাখি মুখে খাবার তুলে খাওয়ায় উড়তে না শেখা পর্যন্ত, , আপনারা ঠিক আমাদের তেমন করেই শিক্ষা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন । আপনাদের এই মাতৃসুলভ আচরণ আজীবন মনে থাকবে প্রিয় অভিভাবক। একজন জন্মদাতা পিতা মাতা যেমন তার সন্তানদের হাত ধরেপথ চলতে শিখায় , সেই হাঁটতে শিখানো হাতটা আপনাদের হাতে এসে নিশ্চিন্তে ছেড়ে দেয়। এর চাইতে আর কোন বড় অভিভাবক থাকতে পারে?
” শ্রদ্ধায় করি অবনত শির
আপনাদের বন্দনায়,
আমরা যেন উজ্জীবিত হয়ে
আপনাদের চেতনায়। ”
আপনাদের ভালোবাসা এবং নৈতিক শিক্ষায় আমাদের নির্ভীক করে তোলে। এরপরেও অনেক সময় আমরা আপনাদের মূল্য বুঝিনা। না বুঝে অনেক সময় অনেক বেয়াদবি করে ফেলি , শেখার ক্ষেত্রে থাকে অনীহা। আপনারা সামান্যতম কষ্ট না নিয়ে আমাদের আলোর পথের পথিক বানাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। বিদায় ক্ষণে আমাদের পুরাতন দিনের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এই কামনা করি। আমরাও কোনদিনও আপনাদের ভুলবো না।
প্রিয় সহপাঠীঃ কি যে কোথা থেকে এসে এত প্রিয় হয়ে উঠেছিলাম তা আজ মনে নেই । শুধু মনে আছে অসংখ্য স্মৃতি ঘেরা মুহূর্ত । যা অবলীলায় চোখের সামনে ভেসে উঠছে আজ। কবে যে কখনও হয়েছিলাম আপন আজ আর মনে নেই।
তবে কেন যেন হচ্ছে মনে, দেহ থেকে প্রাণ টাকে দিয়ে দিচ্ছি বিদায়। যদিও এ বিদায় কালের যাত্রা , সময়ের একান্ত চাওয়া মাত্র। আমাদের এই বিদায়ে শুধুমাত্র স্থান পরিবর্তনের। অন্তঃকরণে আমরা সবাই একত্ব। যে যেখানেই থাকি না কেন মনের সুতায় গেথে থাকবো।
স্নেহের ছোট ভাই ও বোনেরাঃ
” কি বলিব আজ তোমাদের তরে,
পুরনো অনেক স্মৃতি আজ শুধুই মনে পড়ে। ”
তোমাদেরকে কতটুকু পেরেছি জানি না তোমাদের থেকে পেয়েছি শ্রদ্ধার্ঘ্য সাজ সেগুলি মনে পড়ছে আজ। চলার পথে দীর্ঘ পথচলা যখন, তখন তো ছোটখাটো ভুলত্রুটি ভেদাভেদ থাকতেই পারে। আজ সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তোমাদের নিকট ক্ষমার হাত বাড়িয়ে দিলাম। আর তোমাদেরকেও ক্ষমা করে দিলাম। এ সময় এসে তোমাদের জন্য থাকলো অফুরন্ত ভালোবাসা ও শুভকামনা। তোমরাও আমাদের সফলতার জন্য দোয়া রাখবে।
প্রিয় পথপ্রদর্শকঃ
” সমুখে যারা জ্বেলেছে মশাল
শিক্ষার তরণীর,
আলোর পথের পথিক তারা
শিক্ষিত ধরণীর।”
হে অগ্রজঃ আপনাদের ভালোবাসার কাছে আজ আমরা অনেকটা ঋণী। তার চেয়ে বেশি রিনি আপনাদের প্রদর্শিত পথের কাছে। আমরা যেন সেই পথ পাড়ি দিয়ে ঋণ মুক্ত হতে পারি। আমরা ছোটরা অনেক সময় বড়দের সাথে ভুল করে থাকি। কিন্তু বড়দের কোন ভুল থাকে না ছোটদের কাছে। কারণ তাদের সবকিছুই শিক্ষণীয়। তাই আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন। আপনাদের জন্য রইল পূর্ণ দোয়া ও আশীর্বাদ।
( প্রিয় পথপ্রদর্শক হতে উক্ত লাইন গুলো শুধু জুনিয়র ব্যাচমেটদের জন্য যারা বক্তব্য শেষে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলবে )
সম্মানিত সভাপতি, শিক্ষকঅভিভাবক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল শুভাকাঙ্খীদের কাছে আমাদের একান্ত চাওয়া। আপনারা আমাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া রাখবেন। আমরা যেন অসফলতার সাথে আমাদের লক্ষ্যে এভারেস্ট জয় করতে পারি । আমরা যেন পৃথিবীর আলোকিত মানুষ হতে পারি। পরিবারের সম্মুখ সমুজ্জ্বল করতে পারি। সর্বোপরি দেশ ও দশের সহযোগিতায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি।
পরিশেষে সকলের প্রতি রইল আমার বিদায় সালাম। আসসালামুআলাইকুম।
বিদায়ী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। মঞ্চে উপবিষ্ট উক্ত বিদায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং আমার শ্রদ্ধেয় সকল শিক্ষক ও আমাদের সামনে উপস্থিত জুনিয়র শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা সবার প্রতি রইলো আমার আন্তরিক সালাম ও অভিবাদন। আসসালামু আলাইকুম।
অত্যন্ত দুঃখও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হচ্ছে আজ আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান। যদি আমরা মনে করি এটা একটা বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারন মন থেকে চিরতরে বিদায় নেওয়া হয় তো কখনো সম্ভব হবে না।
দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই অত্র প্রতিষ্ঠানের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি, এবং এই প্রতিষ্ঠান থাকা শিক্ষক শিক্ষিকা গন আমাদের অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ্য দান করেছেন যা আমাদের চিরদিন মনে থাকবে।আর এই জন্য আমরা আপনাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকব।
কিন্তু ইচ্ছে না থাকা সত্বেও আজ আমাদের অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে । আজ আমাদের শিক্ষা জীবনের একটি অধ্যায় সমাপ্ত হতে চলেছে অন্যদিকে নতুন একটি অধ্যায়ে পা রাখার উদ্দেশ্যে আপনাদের থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে।
আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন ভবিষ্যত আমাদের শিক্ষা জীবনে আরও উন্নতি ও সাফল্য বয়ে আনতে পারি এবং দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি । একটি নতুন জাতি গঠনের কাজ করতে পারি ।
দীর্ঘ শিক্ষাজীবনে এখানে আমাদেরকে আপনাদের অনেক শাসন বারণ এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এই শাসন গুলো সামরিক বিরক্তকর মনে হলেও আমরা এখন বুঝতে পারছি এগুলো আমাদের জন্য কতটা কল্যাণকর ছিল। আমাদের করা বিভিন্ন ভুল চটি, বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আমার প্রাণপ্রিয় গুরুজন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ যদি কোন কষ্ট পেয়ে থাকেন সন্তান মনে করে আমাদেরকে আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিবেন।
প্রিয় সহপাঠী গান, দীর্ঘদিন পড়াশোনার খাতিরে আমরা বিগত দিনেনিজেদের মধ্যে এতটা মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলেছি যেটা কখনো ভেঙে যাবার নয়। কখন যে একে অপরের এতটা প্রিয় হয়ে উঠেছি জানিনা। আজ এই বিদায়ের মুহূর্তে অশ্রুসিক্ত চোখে তোমাদেরকে বলতে হচ্ছে এই বিদায় টা শুধুমাত্র স্থান পরিবর্তনের জন্য। মন থেকে আমরা চিরদিন একসাথে এবং এক সুতোয় গেঁথে থাকবো।
প্রিয় ছোট শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা। দীর্ঘদিন পথ চলয় তোমরা আমাদের অনেকটা প্রিয় উঠেছিলা । তোমাদেরকে ছেড়ে আজ মন যেতে না চাইলেও জীবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। শিক্ষাজীবন জীবনে চলার পথে আমাদের অনেক ভুল ত্রুটি বিভেদ হয়েছিল । আজ এই বিদায়ের মুহূর্তে তোমাদের নিকট আমাদের ক্ষমার হাতটি বাড়িয়ে দিলাম তোমরা আমাদের ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করে আমাদের জন্য দোয়া করবে এবং আমরাও তোমাদের জন্য দোয়া করি যাতে তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল হয়।
যাইহোক, বিদায়ী মুহূর্তে বেশি কিছু বলতে চাই না। এই প্রতিষ্ঠান সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ, সভাপতি অতিথিগণ, এবং আমার প্রাণপ্রিয় ভাই ও বোনেরা সবার দীর্ঘায়ু ও উজ্জ্বল কামনা করে আমার এই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আসসালামু আলাইকুম।
এস এস সি বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
স্কুল কর্তৃক আয়োজিত এসএসসি পরীক্ষা ২০২২ সালের অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপবিষ্ট সম্মানিত সভাপতি, শিক্ষক অভিভাবক, সামনে অবস্থিত অগ্রজ, অনুজ সকলের প্রতি রইল আমার আন্তরিক সালাম ও অভিবাদন।
যেতে হবে বহুদূর, তাই এই ছাড়া বাঁধন ,
বিরহ ব্যাথাতুর মনে , বয়েছে হাসির কাদন।
তাই আজ ছেড়ে চলেছি সকল মায়া সুশাসন,
সম্মুখে দাঁড়িয়েছে তাই দিতে বিদায়ী ভাষণ।
সম্মানিত একান্ত অভিভাবকঃ আপনাদের একান্ত পরিচর্যায়ও গড়ে ওঠা এক বাগানের ফুল গাছ আমরা। আপনাদের স্নেহ কোমল আচরণ পেয়ে আমরা ধন্য। সদ্য অঙ্কুরোদগম চারা গাছকে আপনারা যেভাবে দীর্ঘদিন বিরামহীন ধরে সেবা-যত্ন করে এই পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন । এই জন্য থাকবে আমাদের মন থেকে আপনাদের প্রতি আজন্ম কৃতজ্ঞতা।
সম্মানিত শিক্ষাগুরুঃ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে আপনারা ছিলেন শৈল্পিক। আপনাদের পাঠদান আমাদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে প্রতিনিয়ত। সহজ সরল সাবলীল ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন আমাদেরকে সব সময়।
অনেকটা সময় আপনাদের অনেক কিছুই আমরা না বুঝে বিরক্তিকর অনুভব করেছি। কিন্তু কখনো আপনাদেরকে বিরক্ত হতে দেখিনি। আজ বুঝতে পারছি একজন মালিক কতটা আঘাত সহ্য করতে পারে শুধুমাত্র একটি ভালো চারাগাছ থেকে গোলাপ উৎপাদন করার জন্য। আর একজন তা শুধুই করে সমাজে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য। আজ আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের কাছে আমাদের বিরক্তিকর আচরণের জন্য বা আমাদের চলার পথে বিভিন্ন ভুল ত্রুটির জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
সম্মানিত অভিভাবক আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রথমত এইযে আপনারা এত সুন্দর একটি প্রতিষ্ঠানে আমাদেরকে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। শেখার জগতে জ্ঞানী গুণী মানুষদের সাথে মেশার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমরা নিজ নিজ অভিভাবককে হারিয়ে পেয়েছিলাম আরো ভালো কিছু কর্তা।
আপনাদের মনের ইচ্ছা গুলো যেন আমরা প্রস্ফুটিত করতে পারি। আমাদের এখন এই কামনা। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।
প্রিয় সহপাঠীঃ অচেনা কতগুলো মুখ, কে কোথা থেকে একত্র হয়ে ছিলাম জানিনা । আজ মনে হচ্ছে একটা গোষ্ঠীকে কি একটা বিদেশী শব্দ গাঁটছাড়া করছে। প্রচলিত একটা গানের কয়েকটি লাইন মনের ভিতর গুনগুন করছে ।
কেন বাড়লে বয়স,
ছোট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায়।
হারাচ্ছে সব, বাড়াচ্ছে ভির
হারানোর তালিকায়।
এই হারিয়ে যাওয়া এইযে সকলের গন্তব্যের পথে ছুটে চলা মাত্র । তাইতো আমি বিদায় শব্দটা ব্যবহার করতে চাচ্ছি না । তবুও আজ যখন আমরা এক শব্দের কাছে বন্দী হয়ে গিয়েছি তখন বলতেই হয়
যেতে নাহি দিব হায়,
তবু যেতে দিতে হয়,
তবু চলে যায়।
প্রিয় অগ্রজঃ যারা আমাদের সারাক্ষণ সঠিক পথ প্রদর্শনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের প্রতি থাকলো চির দায় বদ্ধতা। অনেক সময় না বুঝে ভুল করেছি আমরা। আসলে আপনারা ছিলেন আমাদের কাছে আলোকবর্তিকা। স্নেহ ভালবাসার প্রকৃত উদাহরণ । আপনাদের সুশাসন মনে পড়বে বারবার। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন যেন আমরাও আপনাদের মত উদ্দেশ্যের স্বর্ণ শিখরে উঠতে পারি।
স্নেহের অনুজঃ কি বলবো আজ তোমাদের। ভুলে গেছি সব কথা বিরহ বিষাদে। তোমাদের ছেড়ে যেতে হবে এমন ভাবনা কখনো জীবন তরী জলে নিমজ্জিত করিনি । ভেবেছিলাম সৈয়দ শামসুল হকের মত
একসাথে আছি
এক সাথে বাঁচি
আজও এক সাথেই থাকবই।
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে
সাম্যের ছবি আকবই।
আজ অপূর্ণ থেকে গেল সেই ইচ্ছাটি। সামনের ছবি আঁকা নয় একসাথে থাকার ইচ্ছা, চলার পথে বিভিন্ন ভুল ত্রুটি বিভেদ থাকতেই পারে । আজ এই অশ্রুসিক্ত মন নিয়ে তোমাদের নিকট আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম তোমরা আমাদের ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দিও। আমরাও তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। যদিও ছোটদের ভুল বলতে কোন কিছুই থাকেনা।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, ছোট-বড় সকল ভাই ও বোনেরা সকলের নিকট আমরা আমাদের ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আগামীদিনের সাফল্যের জন্য আমরা সবাই আপনাদের নিকট দোয়া প্রার্থী। আমরা যেন আশা অনুরূপ ফলাফল অর্জন করতে পারি এবং দেশ ও জাতি গঠন করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারি। বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য আর বাড়াতে চাইনা সকলের প্রতি আমার সালাম দেখে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করলাম আসসালামু আলাইকুম।
বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষকের বক্তব্য
যেতে নাহি দিব হায়
তবু যেতে দিতে হয়
তবু চলে যায়
আজকের বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অত্র প্রতিষ্ঠান সম্মানিত প্রধান শিক্ষক মহাদয়, আমার সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মীবৃন্দ প্রতি রইলো আমার সালাম আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
সর্বোপরি আমার সামনে উপবিষ্ট মঞ্চের শোভা বর্ধন করে বসে থাকা প্রাণপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী দের প্রতি রইল হৃদয়ের গভীর থেকে অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি তাদের প্রতি।
বিদায় জিনিসটা বড়ই বেদনার।
বিদায় বড় কষ্টের,
তাই অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজ বলতে হচ্ছে আজ তোমাদের বিদায় অনুষ্ঠান। যদিও আমি মনে করি এটা একটা বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ মন থেকে তোমাদের কখনোই চির বিদায় দিতে পারব না। তোমরা অত্র বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকবছর যাবৎ পড়াশোনা করেছ। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা আনাচে-কানাচে তোমাদের স্পর্শ বিদ্যমান। বিদ্যালয়ের প্রতিটা অঙ্গনে তোমাদের সংস্পর্শ স্মৃতি হয়ে থাকবে। আজ ইচ্ছে না থাকা সত্বেও তোমাদেরকে অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। আজকের এই বিদায় অনুষ্ঠান থেকে তোমাদের শারীরিক বিদায় হলেও অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বা অত্র প্রতিষ্ঠান অঙ্গন থেকে কখনোই তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা সম্ভব নয়।
মনে রাখবে, এই বিদায়, বিদায় নয়। এই বিদায়ে কোন এক জীবনের পদক্ষেপের পরিবর্তন । এই জীবনটা প্রবহমান নদীর মত। যা অবিরাম গতিতে এক সীমান্তের দিগন্তে ছুটে চলা। কবি রবার্ট ফ্রস্টের মত তোমাদের মনে রাখতে হবে “ Miles to go before i sleep “ অর্থাৎ ঘুমোনোর আগে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। বিগত কয়েক বছরে তোমাদের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালবাসা অর্পণ করেছি । কিন্তু মাঝে মাঝে প্রয়োজন অনুযায়ী তোমাদের প্রতি আমরা কঠোর হয়েছি। এই কঠোরতা তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি নির্মাণের উদ্দেশ্যে ছিল। তোমাদের সেটি আমরা খুব সহজেই ভুলতে পারবোনা।
কোন বিদ্যালয়ে সবচাইতে বড় প্রদান সেটা হল ছাত্র-ছাত্রী অর্থাৎ তোমরা। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তোমাদের দারুণ দারুণ অবদান রয়েছে। তোমরা এই বিদ্যালয়ের জীবনের ইতিহাসে একটা দারুণ অংশ হয়ে থাকবে। তোমাদের এই বিদায় শুভ হোক এই আশা করি। তোমরা নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করো। পরীক্ষার কয়েকদিন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো। শিক্ষকদের কথা মেনে চলো, বাবা মায়ের কথা মেনে চলো। সকলকে সম্মান করো। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করো।
তোমরা এই দেশ এবং জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তোমরাই আগামীদিনের এই দেশ তথা সমাজের পরিচালক। আমরা চাই তোমরা সফল হয়ে আমাদের অত্র বিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে আন। পিতামাতা এবং এলাকাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করো। সুনাগরিক হও, এবং সর্বোপরি তোমরা শিক্ষিত হও, ভালো মানুষ হও।
তোমরা হয়তো ক্লাসে ফার্স্ট সেকেন্ড কিংবা থার্ড হতে পারবে না, কিন্তু চাইলেই সবাই ভালো মানুষ হতে পারো। আর তোমরা ভাল পড়লেই একটা দেশ তথা একটি সমাজ তথা একটি রাষ্ট্র ভালো হবে। বিদায়ের এই শেষকালে মনে রেখো সফল হওয়ার জন্য দুটি জিনিস প্রয়োজন তার একটি হচ্ছে “ স্বপ্ন বা মানসিক ইচ্ছে” আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে “কঠোর পরিশ্রম” এই দুটো জিনিস থাকলে তোমাদের কেউ আটকাতে পারবেনা। তোমরা সফল হবেই। অতএব বিদায়ের প্রাক্কালে আবেগঘন মুহূর্তে উপস্থিত সকলের দীর্ঘায়ু কামনা করি এবং তোমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল কামনা করে আজকের বিদায়ী বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। তোমরা আমাদের জন্য দোয়া করো আমরাও তোমাদের জন্য দোয়া করি। আসসালামু আলাইকুম
লিখনে Br Abdur Rahman
বিদায় ছন্দ
১
দেহকে জানাই চির বিদায়
অনেকেই তো ছিল এ যাত্রায়
আমি এখন বাতাসে ভাসব নির্দ্বিধায়।
২
কিছু বন্ধুত্ব শেষ হয়েও শেষ না
মনের গহীনে মিশে থাকে অতল হিয়ায়
তাই, আমার হৃৎস্পন্দন ছুঁয়ে থাকা বন্ধুদের বলছি
বিদায়, বন্ধু বিদায়
৩
মন চায় না দিতে বিদায়
কিন্তু আমরা সত্যিই বড় নিরুপায়
সময় চলে যাচ্ছে সময়ের মত
মনে করে দেখো স্মৃতি আছে কত!
৪
বিদায় বেলায় বিরহব্যাথায় আখি ওঠে ছলছলি
যাবার বেলায় যে অপরের কাঁদায় তারেই মানুষ বলি।
৫
মন চায় না দিতে বিদায়
কিন্তু আমরা সত্যিই বড় নিরুপায়
সময় চলে যাচ্ছে সময়ের মতো
মনে করে দেখো স্মৃতি আছে কত।