ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম । ই ট্রেড লাইসেন্স তৈরি
বর্তমানে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরম্ভ করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি বাধ্যতামূলক ডকুমেন্ট। ট্রেড লাইসেন্স ব্যতীত ব্যবসা আরম্ভ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। চলুন জেনে নেই ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত
আপনি নতুন কোনো ব্যবসা আরম্ভ করতে চাচ্ছেন? ব্যবসা এর শুরুতে তাহলে আপনাকে যেটি করতে হবে সেটি হল ট্রেড লাইসেন্স। একটি ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করতে এবং ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ট্রেড লাইসেন্স করা বাধ্যতামূলক। আর অনেকেই লাইসেন্স করার নিয়ম না জানায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। ট্রেড লাইসেন্স কোথা থেকে করবো? ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা খরচ হবে? কত দিনের মধ্যে হাতে পাব ইত্যাদি প্রশ্ন বিভিন্ন ভাবে মনে জাগতে পারে। মূলত ট্রেড লাইসেন্স করার উপায় টা একদম সহজ।
বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্স দুইভাবে করা যায় প্রথমত হলো নিকটস্থ সরকারি কার্যালয় থেকে আপনি সরাসরি গিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন আর দ্বিতীয়তঃ হল অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে যেটাকে বলা হয় ই-ট্রেড লাইসেন্স। আজকের আলোচনায় ই-ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম এবং সরাসরি গিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরব
এই পোস্টের সার সংক্ষেপ
ট্রেড লাইসেন্স কি
ট্রেড লাইসেন্স হল হল কোন ব্যবসায় কার্যক্রম আরম্ভ করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত একটি অনুমতি পত্র যা ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে। ইংরেজিতে Trade শব্দের অর্থ হলো ব্যবসায় আর License শব্দের অর্থ হলো অনুমতি। 2009 সালের সিটি কর্পোরেশন কর আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ট্রেড লাইসেন্স এর আবির্ভাব ঘটে।
মূলত এই লাইসেন্স একজন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। অর্থাৎ একমালিকানা, অংশীদারি ব্যবসায় এবং যৌথমূলধনী ব্যবসায় জন্য আলাদা আলাদা লাইসেন্স রয়েছে যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন করা হয়। এবং প্রতিটি আলাদা আলাদা ব্যবসার জন্য আলাদা আলাদা ট্রেড লাইসেন্স করা বাধ্যতামূলক।
ট্রেড লাইসেন্স কত প্রকার
২০১৬ সালের গেজেট অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট ২৯৪ ক্যাটাগরিতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এই ক্যাটাগরি সমূহ দেশের সমস্ত সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকার জন্যই প্রযোজ্য।
ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজনীয়তা
আইনগত দিক থেকে আপনি কখনোই একটি ব্যবসায় ট্রেড লাইসেন্স বিহীন আরম্ভ করতে পারবেন না। আপনি যদি সিটি করপোরেশন এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান তাহলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। যদি কেউ ট্রেড লাইসেন্স বিহীন ব্যবসা আরম্ভ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।
শুধুই যে আইনি বাধ্যবাধকতার জন্য আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে বিষয়টা এমন নয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর দরকার রয়েছে।
ট্রেড লাইসেন্স কি কি কাজে লাগে
- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নামে কোন ব্যাংক একাউন্ট করার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স লাগে
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে কোন লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স লাগে
- কোন ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য হতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স লাগে
- ব্যবসার জন্য টিন সার্টিফিকেট ভ্যাট নিবন্ধন করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স লাগবে
- পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স লাগবে
- মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ রকেট নগদ ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট সেবা গ্রহণ করতে ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
- ইত্যাদি
ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আপনার সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে নির্ধারিত ফি জমাদানের পর আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেই হবে।
কোথা থেকে ট্রেড লাইসেন্স করবেন
আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি যদি সিটি কর্পোরেশনের আওতায় হয় তাহলে সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় থেকে আপনার ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন।
আপনার ব্যবসা কার্যক্রম যদি পৌরসভা এলাকার আওতায় হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে পৌরসভা কার্যালয় থেকে আপনার ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে
আর যদি আপনার ব্যবসায় কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদ এর আন্ডারে থাকে তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে আপনার ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।
ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে
সাধারণ ট্রেড লাইসেন্সের জন্য: ভাড়ার রশিদ অথবা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের কপি।
- শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স: উপরোক্ত সবগুলি ডকুমেন্টসমূহ, এবং এর সাথে-
- পরিবেশ সংক্রান্ত অনাপত্তি পত্র
- প্রতিষ্ঠানের অবস্থান চিহ্নিত মানচিত্র
- অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র
- ডি.সি.সি. র নিয়মাবলি মেনে চলা হবে এমতে ১৫০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারপত্র
- কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত হাসপাতালের ক্ষেত্রে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন।
- লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে:
- মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল
- সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন
- ছাপাখানা ও আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে – ডেপুটি কমিশনারের অনুমতি
- রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে – মানবসম্পদ রপ্তানি ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স
- অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষেত্রে – অস্ত্রের লাইসেন্স
- ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে – ড্রাগ লাইসেন্সের কপি
- ট্রাভেলিং এজেন্সির ক্ষেত্রে – সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি
ই-ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম
ই ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়েবসাইট www.etradelicense.gov.bd তে প্রবেশ করতে হবে। এরপরে Click For New Registration ক্লিক করে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য এবং আপনার ব্যাবসায়ের সব তথ্য দিয়ে একাউন্ট নিবন্ধন করতে হবে।
ই-ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য নিচের ইউটিউব ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন।
ট্রেড লাইসেন্স ফি
মূলত ব্যবসার ধরনের ওপর ট্রেড লাইসেন্সের ফি নির্ভর করে। সাধারণভাবে ট্রেড লাইসেন্স ফি ২০০ থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আন্ডারে ট্রেড লাইসেন্স করতে হলে ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে । ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারণের নীতিমালা এবং লাইসেন্সের জন্য খরচ সমূহ বাংলাদেশ গেজেট সিটি কর্পোরেশন শাখা ২ পিডিএফ দেখতে এখানে ক্লিক করুন। trade license fee in bangladesh 2022 pdf
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বা ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করার নিয়ম
- পূর্বের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
- দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর বিষয়ক কর্মকর্তা নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করবেন।
- ফি: লাইসেন্স নবায়ন ফি নতুন লাইসেন্সের সমপরিমাণ। এই ফি আগের মতোই লাইসেন্স ফরমে উল্লিখিত ব্যাংকে প্রদান করতে হয়।
একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে আপনি সারা দেশেই আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন বা সাপ্লাই দিতে পারবেন। তবে আপনার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান যে এলাকায় রয়েছে অর্থাৎ আপনার অফিস যে জায়গায় রয়েছে আপনাকে সেই অফিস এর আওতাধীন এলাকা থেকে আপনার ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।
একটি ট্রেড লাইসেন্স নতুন আবেদন করার ক্ষেত্রে সাধারণত তিন থেকে সাত দিন সময় লাগে। ই-ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সেটি নাও হতে পারে আবার বেশি সময় ও লাগতে পারে
জ্বী না আপনি কখনো ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ব্যবসা আরম্ভ করলে আপনি পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন না। আপনাকে আপনার আওতাধীন এলাকায় সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকেই ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
অনেকেই মনে করেন সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে গ্রামে বসে ব্যবসা আরম্ভ করলে সেই ট্রেড লাইসেন্স এর মান অনেক বেশি। সত্যি কথা বলতে সারা বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে আপনি ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করবেন সব ট্রেড লাইসেন্স এর ক্ষমতা এবং মান একরকম এবং ট্রেড লাইসেন্স এক